কিয়েভে মস্কোর ড্রোন হামলা, নিহত ১৩


ইউক্রেনে আবারও বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রাজধানী কিয়েভে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে মস্কোর সেনারা। এ হামলায় অন্তত ১৩ ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে দেশটির জাতীয় জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে রয়েছে এক শিশুও। আহত হয়েছে আরও কমপক্ষে ১৩২ জন, আহতদের মধ্যে রয়েছে ১৪ শিশু। বার্তা সংস্থা এপির তথ্যমতে, তিন বছর ধরে চলমান এ যুদ্ধে এবারই একক কোনো হামলায় এত সংখ্যক শিশু আহত হল।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাতভর হামলা চালিয়েছে পুতিন বাহিনী। এই হামলাকে সাম্প্রতিক সময়ে চালানো হামলাগুলোর মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। কিয়েভ শহরের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো জানিয়েছেন, রুশ হামলায় কিয়েভের একটি নয়তলা আবাসিক ভবনের একটি বড় অংশ ধসে পড়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন অনেকেই। তাদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীরা তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এক বিবৃতিতে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, ৩০৯টি শাহেদ ড্রোন ও ডিকয় ড্রোন এবং আটটি ইস্কান্দার-কে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এর মধ্যে ২৮৮টি ড্রোন ও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয় ইউক্রেন। তবে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২১টি ড্রোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
কেবল কিয়েভেই অন্তত ২৭টি স্থানে আঘাত হানে সেসব ড্রোন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহরের সোলোমিয়ানস্কি ও স্ভিয়াতোশিনস্কি এলাকা। স্কুল, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় শতাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ব ইউক্রেনের ক্রামাতোরস্ক শহরেও রুশ বাহিনীর আরেকটি আক্রমণে পাঁচতলা একটি ভবনে আঘাত লাগে। এতে একজন নিহত এবং অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন বলে জানান দোনেৎস্ক অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক ভাদিম ফিলাশকিন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একই রাতে ৩২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে তারা। রাশিয়ার পেনজা অঞ্চলের একটি শিল্প এলাকায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় আগুন লাগে, তবে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গভর্নর ওলেগ মেলনিচেঙ্কো। এ ছাড়া ভলগোগ্রাদ অঞ্চলে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ রেললাইনে পড়ায় কিছু ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রুশ হামলায় প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা ও ইউরোপের সঙ্গে পুরো বিশ্বই দেখল আমার শান্তি চুক্তির আকাঙ্ক্ষার জবাব রাশিয়া কীভাবে দিল। নতুন করে হত্যাকাণ্ড চালাল তারা। শক্তি, সক্ষমতা ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়।’ এ সময় পশ্চিমা মিত্রদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি। মস্কোর ওপর আরও চাপ প্রয়োগের অনুরোধও করেন তিনি।
এদিকে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর দোনেৎস্কের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর চাসিভ ইয়ারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ভিক্টর ত্রেহুবভ রাশিয়ার এই দাবিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করছেন। তবে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় চাসিভ ইয়ারে কমপক্ষে সাতটি সরাসরি যুদ্ধের ঘটনা হয়েছে। ওই বিবৃতির সঙ্গে সংলগ্ন মানচিত্রে বেশির ভাগ অংশ রুশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দেখানো হয়েছে।