দুশ্চিন্তা কমে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ফিরেছে স্বস্তি


বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নেমে আসায় স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পাল্টা শুল্ক প্রতিযোগী দেশগুলোর সমান হওয়ায় এটি ব্যবস্থাপনাযোগ্য বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, এখন পাল্টা শুল্কের যে হার নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতায় খুব একটা সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে পাল্টা শুল্কের নতুন হার ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী ভিয়েতনামের পণ্যেও ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার পণ্যে ১৯ শতাংশ এবং ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ হয়।
নতুন এই শুল্কহার স্বস্তিকর বলে মনে করছেন তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চীন, ভারতসহ আমাদের প্রতিযোগীদের তুলনায় শুল্ক বেশি নয়। এটাই আমাদের রপ্তানির জন্য বড় সুবিধা। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির খবর। কারণ, আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব না। এ শুল্কহার ব্যবস্থাপনাযোগ্য।’
নিয়ম অনুসারে পাল্টা শুল্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা সব আমদানি শুল্কই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বহন করবে বলে জানান মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, এফওবি রপ্তানি পদ্ধতিতে সাধারণত ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোই বহন করে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়, সেটা পরিমাণে কম।
এই বাড়তি পাল্টা শুল্ক রপ্তানিতে চাপ তৈরি করবে বলেও মনে করছেন অনেক ব্যবসায়ী। এই শুল্ক নিয়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নতুন করে দর-কষাকষি করতে হবে বলেও জানান তাঁরা।
জানাতে চাইলে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘পাল্টা শুল্কের হার কমেছে, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য একটা ভালো ও স্বস্তির দিক। তবে এতে করে আগামী তিন মৌসুম অর্থাৎ প্রায় দেড় বছর আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই শুল্ক সমন্বয়ে আমাদের রপ্তানি বাড়বে না। উল্টো মূল্যের প্রতিযোগিতায় ফেলে দেবে।’
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘এই বাড়তি শুল্কের কারণে পণ্যের মূল্য কিছুটা বাড়তে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি কমাবে। শেষ পর্যন্ত আমাদের অর্ডার কিছুটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতারা অন্যায্যভাবে দাম কমানোর চেষ্টা করতে পারেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর জন্যও শুল্কের হার প্রায় একই রকম বা তার চেয়ে বেশি হওয়ায় এই মুহূর্তে শক্তিশালী দর-কষাকষিই একমাত্র উপায়। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কিন ক্রেতাদের বোঝাতে হবে যে এই আমদানি শুল্ক আমদানিকারকদের বহন করতে হবে। পরিশেষে এটি চূড়ান্ত ভোক্তাকেই বহন করতে হবে। এ জন্য আমাদের উদ্যোক্তাদের আরও দক্ষ ও সচেতন হতে হবে।’
বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘শুল্ক সমন্বয়ের পর আসল কাজটি এখন শুরু। আমাদের এখন ক্রেতাদের সঙ্গে নতুনভাবে দর-কষাকষি করতে হবে এবং খরচ, সুযোগ ও রপ্তানি বাড়ানোর একটি দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। যদিও চীন এই মুহূর্তে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে, তবে এটাকে কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। বিগত তিন মাসের তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপিত হওয়া সত্ত্বেও চীনের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়নি।’