ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বেশ কিছু পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে: নয়াদিল্লি


আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে নয়াদিল্লির ওপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ট্যারিফ নীতি, রুশ তেল কেনা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে সমালোচনা, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান চুক্তি নিয়ে দ্বিধা, ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়াকে ফিরিয়ে আনার মানবিক ইস্যু— এবং এর পাশাপাশি কোয়াড ও চীন-পাকিস্তান ঘিরে কৌশলগত প্রশ্ন—সব মিলিয়ে ভারত সরকারের ওপর এখন বহুমাত্রিক চাপ। এই প্রেক্ষাপটে আজ শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একটানা ব্যাখ্যা করলেন নয়াদিল্লির অবস্থান।
তিনি জানালেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের মতপার্থক্য আছে ঠিকই, তবে কূটনৈতিক স্তরে তা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি নজরে রেখেছেন। দুই দেশের সম্পর্ক এই মুহূর্তে বেশ কিছু পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ভারত তার জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ থেকে কোনোভাবেই সরে আসবে না।’
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিগত সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ, তবে ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি কোনো চাপের মধ্যে চলে না। যৌথ মূল্যায়ন চলছে, সিদ্ধান্ত সময় নিয়ে হবে।’
রুশ তেল প্রসঙ্গে তিনি সাফ জানিয়েছেন, ‘ভারতের শক্তি নিরাপত্তা ও মূল্যস্ফীতির বাস্তবতা মাথায় রেখেই আমরা তেল কিনছি। আমাদের অবস্থান যুক্তিযুক্ত এবং দায়িত্বশীল।’
সবচেয়ে মানবিক ইস্যু ছিল ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নার্স নিমিষা প্রিয়াকে নিয়ে। মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা পরিবারটির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। উচ্চপর্যায়ে ইয়েমেন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’ যদিও কার্যত তিনি স্বীকার করেই নেন, এটি একটি কঠিন কূটনৈতিক সংকট।
কোয়াড নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি কোনো সামরিক মঞ্চ নয়, বরং একটি অংশীদারিত্ব যেখানে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলকে অবাধ ও স্থিতিশীল রাখা মূল লক্ষ্য।’ চীন ও পাকিস্তান প্রসঙ্গে সংক্ষেপে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল ঠিকই, কিন্তু আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আমাদের অবস্থান সব সময় কঠোর।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এখন ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। আমরা সংলাপ ও বাস্তবতানির্ভর কূটনীতি মেনে চলি। ভারতের অবস্থান আন্তর্জাতিক মঞ্চে দায়িত্বশীল ও পরিণত।’
বিশ্লেষকদের মতে, আজকের সাংবাদিক সম্মেলন ছিল যেন এক ধরনের ব্যাখ্যা-বিষয়ক কৌশল। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নয়াদিল্লি নিজেকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে রাখার চেষ্টা করছে, যা প্রতিটি লাইনেই স্পষ্ট। ভারত সরকার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়েছে, আর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ সেই জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছে।