ইংল্যান্ড-ভারত ‘ফাইনালে’র রোমাঞ্চে জিতবে কে


সাত সপ্তাহের মধ্যে পাঁচটি টেস্ট খেলার ঠাসা সূচি। ইংল্যান্ড ও ভারত—দুই দলের ক্রিকেটাররাই মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত। এই ক্লান্তি নিয়েই সিরিজের শেষ টেস্ট খেলতে আজ ওভালে নামছেন জো রুট, বেন স্টোকস, রবীন্দ্র জাদেজা, শুবমান গিলরা।
তবে ক্রিকেটারদের ক্লান্তি ছাপিয়ে ওভালে ক্রিকেট রোমাঞ্চের হাতছানি। এই সিরিজে দুই দলই দারুণ খেলেছে, যদিও চার টেস্ট শেষে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ইংল্যান্ড। কিন্তু সর্বশেষ ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে পরাজয়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে যেভাবে টেস্ট ড্র করেছে তারা, তাতে শেষ টেস্টের আগে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ভারতও। ওভালে জিতে সিরিজ বাঁচানোর সুযোগ ভারতের সামনে। তাই শেষ টেস্টে ভারত নিজেদের নিংড়ে দিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে শেষ টেস্টে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আশা।
একটা উত্তেজনা ধরে রেখেই অবশ্য শেষ টেস্টে উপনীত সিরিজ। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসের ‘হ্যান্ডশেকে’র প্রস্তাবে বেশ ক্ষুব্ধই ভারতীয়রা। শেষ দিনে দিনের খেলা শেষের যখন ১৫ ওভার বাকি, ড্র মেনে উইকেটে থাকা ভারতীয় দুই ব্যাটার রবীন্দ্র জাদেজা এবং ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে হাত মেলাতে চেয়েছিলেন স্টোকস। ততক্ষণে ভারতের পরাজয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ভারতীয় দুই ব্যাটার সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছেন। এই অবস্থায় স্টোকসের প্রস্তাবটা বড্ড বেমানান ঠেকেছে ভারতীয়দের কাছে। স্টোকসের প্রস্তাবটা তাই তাঁরা জাদেজা ও সুন্দরের দুটি সুন্দর সেঞ্চুরি আটকানোর বাহানা হিসেবে দেখছেন।
এখানেই শেষ নয়, পরশু ওভালে অনুশীলনে গিয়ে ওভালের প্রধান কিউরেটর লি ফোর্টিসের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিও হয়েছে; যা সিরিজের শেষ টেস্টের আগে ভালোই উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ওভাল টেস্টের ফলাফল কী হবে, তা সময়ই বলবে, তবে টেস্ট শুরুর আগে তিনটি বিষয়ে নজর থাকবে সবার।
খেলছেন না বুমরা
সিরিজ বাঁচাতে হলে জিততেই হবে—এমন পরিস্থিতিতে অনুমান করা হয়েছিল, ভারত হয়তো তাঁর সেরা বোলিং অস্ত্রটি খেলাতেও পারে। কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যা তথ্য, তাতে জসপ্রীত বুমরা খুব সম্ভব খেলছেন না।
চলমান সিরিজে তিনটি টেস্ট খেলার কথা ছিল জসপ্রীত বুমরার। তিনটি টেস্ট আগেই খেলে ফেলেছেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডের ধীরগতির পিচে ৩৩ ওভার বল করে দুটি উইকেটও নিয়েছেন। তবে তিনি রানই দিয়েছিলেন এক শর বেশি—১১২! টেস্টের এক ইনিংসে এত বেশি রান দেওয়ার ঘটনা বুমরার ক্যারিয়ারে এই প্রথম। সেই সঙ্গে তাঁর ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করার হারও কমেছে। সব মিলিয়ে খুব সম্ভব তাঁর খেলা হচ্ছে না। তাঁর জায়গায় দলে ফিরতে পারেন আকাশ দীপ। বুমরার অনুপস্থিতিতে যিনি এজবাস্টনে ১০ উইকেট নিয়ে ভারতকে জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। আজ সকালে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নেবেন বুমরাকে খেলানো হবে কিনা।
নেই স্টোকস, আর্চারও
ওল্ড ট্রাফোর্ডে দলকে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন বেন স্টোকস। সেই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া স্টোকস দু্ই ইনিংসে বল করেছিলেন ৩৫ ওভার। আর পুরো সিরিজে ১৪০ ওভার। এক সিরিজে এত বেশি ওভারে স্টোকসের বল করা এটাই প্রথম। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে অস্বস্তি নিয়েই ১১ ওভার বোলিং করেন তিনি। ব্যথায় কখনো ঊরুতে হাত বুলিয়েছেন, কখনোবা বাইসেপসে। নভেম্বরেই আবার ইংল্যান্ডের সামনে অ্যাশেজ। সব মিলিয়ে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে স্টোকসকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইংল্যান্ড। বাইসেপস টেন্ডনের চোটে ভুগছেন তিনি। স্টোকসের অনুপস্থিতিতে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেবেন ওলি পোপ। কাজের চাপ কমাতে এই টেস্টে বিশ্রামে রাখা হচ্ছে দুই পেসার ব্রাইডন কার্স ও জফরা আর্চারকেও। বাদ পড়েছেন স্পিনার লিয়াম ডসনও। এদের অনুপস্থিতিতে একাদশে ফিরেছেন জেমি ওভারটন, গাস অ্যাটকিনসন ও জশ টাং। একাদশে আছেন জ্যাকব বেথেলও।
রেকর্ড ডাকছে গিলকে
সামনে থেকে দলকে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়, চলতি সিরিজে সেটাই যেন দেখিয়ে যাচ্ছেন শুবমান গিল। ব্যাটে ছোটাচ্ছেন রানের ফোয়ারা। নেতৃত্বের অভিষেক সিরিজেই এ পর্যন্ত চারটি সেঞ্চুরি করেছেন। চার টেস্টে ৯০.২৫ গড়ে তিনি করেছেন সিরিজ সর্বোচ্চ ৭২২ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজে এটিই ভারতীয় কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ ছিল যশস্বী জয়সওয়ালের ৭১২ রান। তাঁকে টপকে যাওয়ার পর গিলের সামনে এখন সুনীল গাভাস্কারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ড। ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি ৭৭৪ রান করেছিলেন, যা যেকোনো দ্বিপক্ষীয় টেস্ট সিরিজে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ। গাভাস্কারকে ছাড়িয়ে যেতে গিলের চাই মাত্র ৫২ রান। ১৯৩৬-৩৭ অ্যাশেজে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ৮১০ রান করেছিলেন, যা কোনো অধিনায়ক হিসেবে এক সিরিজে সর্বোচ্চ। ডনের এই রেকর্ড ভাঙতে গিলের দরকার ৮৯ রান।