২৫% শুল্কের পর এবার ভারতের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খড়্গ


ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য বাণিজ্যের অভিযোগে ছয় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এসব ভারতীয় কোম্পানি ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনাবেচায় ‘গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনের’ সঙ্গে জড়িত। তারা ইচ্ছা করেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ভারতের প্রখ্যাত কিছু পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসায়ী। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে আলকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৮৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।
এর বাইরে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেড ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৫১ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি মিথানলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করেছে। জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেড একই সময়ের মধ্যে ৪৯ মিলিয়ন ডলারের বেশি টলুইনসহ ইরানি পণ্য আমদানি করেছে।
রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি নামের এক প্রতিষ্ঠান মিথানল ও টলুইনসহ প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কিনেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। প্রেসিডেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলারের মিথানল আমদানি করেছে। এ ছাড়া, কাঞ্চন পলিমারস নামের এক প্রতিষ্ঠান ইরানি পলিথিন আমদানি করেছে ১৩ লাখ ডলারের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় দেশটিতে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের মার্কিন সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে এবং কোনো মার্কিন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে আর বাণিজ্য করতে পারবে না। এমনকি এসব কোম্পানির ৫০ শতাংশ বা তার বেশি মালিকানা যে প্রতিষ্ঠানের, সেগুলোকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় ধরা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই পদক্ষেপ ইরানের বিরুদ্ধে তাদের ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতির অংশ। বিশেষ করে ইরানের গোপন নৌপথ ও মধ্যস্থতাকারী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের সরবরাহ ঠেকাতে তারা এমন ব্যবস্থা নিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, ইরান এসব রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে তথাকথিত ‘অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি’ এবং ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে’ সমর্থন দিচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে ইরানের ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে ২০১৯ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের আগের নিষেধাজ্ঞার জেরে ইরানি তেলের আমদানি অনেক কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তালিকা’ থেকে বাদ পড়তে চাইলে এসব ভারতীয় কোম্পানি আপিল করতে পারবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মতে, নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো ‘আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।’
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানও ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বৈশ্বিক বাণিজ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ।