শিরোনাম

পর্যটকদের জন্য দ্বার খুলে দিচ্ছে বিশ্বের অন্যতম নিঃসঙ্গ একটি দেশ

পর্যটকদের জন্য দ্বার খুলে দিচ্ছে বিশ্বের অন্যতম নিঃসঙ্গ একটি দেশ

সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্র তুর্কমিনিস্তান এত দিন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দেশগুলোর একটি। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির সরকার ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার ঘোষণা দেওয়ায় আশাবাদী হচ্ছেন ভ্রমণপ্রেমীরা। তবে গত এপ্রিলে নতুন নিয়মের ঘোষণা এলেও এখনো এটি বাস্তবায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ জানানো হয়নি।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সিএনএন জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে তুর্কমিনিস্তানে ভ্রমণ করতে হলে সরকার অনুমোদিত ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে হতো। শুধু তাই নয়, এর জন্য দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ‘লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন’ নিতে হতো। জটিল এই প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় সময়ই এক মাস সময় লেগে যায়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এই চিঠির প্রয়োজনীয়তা উঠে যেতে পারে এবং অনলাইন আবেদন ব্যবস্থা চালু হলে বিদেশিদের ভিসা পাওয়া সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তারপরও স্থানীয় গাইড ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে দেশটিতে প্রবেশ করা কঠিন হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তুর্কমিনিস্তানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হলো ‘দারভাজা গ্যাস ক্রেটার’। এটি ‘নরকের দরজা’ নামে পরিচিত। সোভিয়েত আমলে দুর্ঘটনাবশত তৈরি হওয়া এই জ্বলন্ত গর্তে এখনো আগুন জ্বলছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমে এসেছে। গন্তব্যটি রাজধানী আশগাবাত থেকে চার ঘণ্টার পথ। পর্যটকেরা সেখানে বিশেষ ধরনের ‘ইয়ুর্ট ক্যাম্পে’ রাত কাটিয়ে আগুনের উত্তাপ ও স্ফুলিঙ্গ উপভোগ করেন।

নরকের দরজা হিসেবে খ্যাত এই বিশাল গর্ত একটি দুর্ঘটনা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। ছবি: সিএনএন
নরকের দরজা হিসেবে খ্যাত এই বিশাল গর্ত একটি দুর্ঘটনা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। ছবি: সিএনএন

তবে দারভাজা ছাড়াও তুর্কমিনিস্তানে আছে ইতিহাসে মোড়া সিল্ক রোডের শহরগুলো। আছে কুনিয়া-উরগেনচের মিনার ও সমাধিসৌধ, মেরভের ধ্বংসাবশেষ এবং আশগাবাত শহরের সাদা মার্বেলে গড়া ভবনসমূহ। আশগাবাত শহরের অদ্ভুত স্থাপত্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তেল ও গ্যাস মন্ত্রণালয়ের লাইটার-আকৃতির ভবন, কিংবা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইনডোর ফেরিস হুইল। এগুলো শহরটিকে এক বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ দিয়েছে।

নরওয়ের লেখক ও নৃতত্ত্ববিদ এরিকা ফ্যাটল্যান্ড বলেন, ‘আশগাবাত সম্ভবত সবচেয়ে অদ্ভুত রাজধানী যা আমি দেখেছি। পুরো শহর যেন এক ভুতুড়ে সাদা রাজপ্রাসাদ।’

তুর্কমিনিস্তানের এই বিচ্ছিন্নতা শুরু হয় ১৯৯১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই। সে সময় দেশটির নেতা সাপারমুরাত নিয়াজভ সোভিয়েত ধারাকে পরিত্যাগ না করে বরং একনায়কতন্ত্রের পথে হাঁটেন। বিশাল গ্যাস সম্পদ থাকার কারণে দেশটি বহির্বিশ্বের সহযোগিতা ছাড়াই টিকে থাকতে পেরেছে। নিয়াজভের মৃত্যুর পরেও দেশটির নীতি খুব বেশি বদলায়নি।

তুর্কমিনিস্তানের রাজধানী আশগাবাতের রাস্তা। ছবি: এএফপি
তুর্কমিনিস্তানের রাজধানী আশগাবাতের রাস্তা। ছবি: এএফপি

তবে গত এক দশক ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে তুর্কমিনিস্তান। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে আগ্রহী হয়েছে। ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে গ্যাস চুক্তি এবং এখন পর্যটন খাত উন্মুক্ত করা সেই কৌশলেরই অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

তুর্কমিনিস্তানের প্রতিবেশী দেশ উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান পর্যটনের দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। প্রতিবেশীদের দেখেই হয়তো তুর্কমিনিস্তানও অবশেষে বুঝতে পারছে, সময় এসেছে নিজেকে উন্মুক্ত করার। ভবিষ্যতে ভিসা নীতিতে আরও শিথিলতা এলে, বিশ্বের সর্বাধিক গোপন ও রহস্যময় দেশটির দুয়ার সত্যিই খুলে যেতে পারে সাধারণ পর্যটকদের জন্য।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button