দিনের ক্লান্তির পরও রাতে ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে?


সারা দিন ক্লান্তিবোধ করছেন, চোখ বন্ধ হয়ে আসছে; কিন্তু বিছানায় গেলেই ঘুম উধাও। এমন অভিজ্ঞতা অনেকের হয়।
এই সমস্যার পেছনে নানান কারণ থাকতে পারে। যেমন দেহঘড়ির গোলমাল, ভুলভাবে ঘুমানো, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম কিংবা কোনো অসুখ। কারণগুলো জেনে নিয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করুন।
দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ
বিছানায় শুয়ে আছেন, কিন্তু মাথায় ঘুরছে হাজারো চিন্তা। বেশির ভাগ মানুষের এটি খুবই সাধারণ সমস্যা। দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। অনেক সময় এটা ইনসমনিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেডিটেশন চর্চা করতে পারেন। দরকার হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সন্ধ্যার পর মেলাটোনিন বাড়তে শুরু করে এবং রাত ২টা থেকে ৪টার মধ্যে বেশি থাকে। ঘুমানোর উপযুক্ত সময় সাধারণত মেলাটোনিন বাড়ার দুই ঘণ্টা পর।
বিষণ্নতা বা মানসিক অবসাদ
বিষণ্নতায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের ঘুমের সমস্যা হয়। শুধু ইনসমনিয়া নয়, বিষণ্নতা বা মানসিক অবসাদ থাকলে ঘুম ভেঙে যাওয়া, অল্প ঘুম কিংবা অস্বাভাবিক ঘুম হতে পারে। বিষণ্নতা থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসা জরুরি। এর সঙ্গে ঘুমের চিকিৎসাও যুক্ত থাকতে পারে।
ক্যাফেইন কখন কতটুকু খাবেন
ক্যাফেইন (যেমন কফি, চা, এনার্জি ড্রিংক) আমাদের সতেজ রাখে। কিন্তু এটি বেশি ও ভুল সময়ে খেলে রাতে ঘুম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কফি পান করার ৫ ঘণ্টা পরও তার অর্ধেক প্রভাব শরীরে থাকে। তাই সন্ধ্যার পর কফি ও চা পান বাদ দেওয়া ভালো। রাত ১০টায় ঘুমাতে চাইলে বিকেল ৪টার পর ক্যাফেইন গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
স্ক্রিন টাইম নিয়ে সচেতনতা
মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ ও টিভি থেকে যে নীল আলো বের হয়, তা মস্তিষ্কে মেলাটোনিন হরমোন তৈরি কমিয়ে দেয়, যেটা ঘুম আনার জন্য দরকার। সমাধান হলো, ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে এসব ডিভাইস বন্ধ রাখুন। প্রয়োজনে ব্লু লাইট ব্লকার চশমা ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া আজকাল মোবাইল ফোনে হলুদ আলো চালু করার উপায় রয়েছে। সেটি ব্যবহার করুন।
করোনা ও ঘুম
করোনা হওয়ার পর অনেকের ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। কিছু গবেষণার ফলে দেখা গেছে, একবার করোনায় আক্রান্ত মানুষদের ৫ থেকে ১০ শতাংশ ইনসমনিয়ায় ভুগতে পারে। আর লং করোনা রোগীদের প্রায় ৪০ শতাংশ মাঝারি থেকে গুরুতর ঘুমের সমস্যায় ভোগে। করোনার পর ঘুমের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মানসিক চাপ ও দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার প্রতিক্রিয়াও এ সমস্যা বাড়াতে পারে।
ঘুমজনিত অন্যান্য রোগ
স্লিপ অ্যাপনিয়া (ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া), রেস্ট লেস লেগ সিনড্রোম (চিনচিনে অস্বস্তিতে পা নাড়াতে ইচ্ছা করা), কিংবা ডিলে স্লিপ ফেজ সিনড্রোম (রাত করে ঘুমাতে যাওয়া ও সকালবেলা ঘুম না ভাঙা) এই সমস্যাগুলো ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই এসব সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

দিনে ঘুমানো ঠিক কি না
দিনের হালকা ঘুম খারাপ নয়। এটি শরীর-মন সতেজ রাখতে সাহায্য করে। তবে দুপুরে অনেকক্ষণ ঘুমালে কিংবা বিকেলের দিকে ঘুমালে রাতে ঘুম আসতে দেরি হয় অথবা ঘুম ভালো হয় না। সমাধান হলো, দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘুম সীমাবদ্ধ রাখুন। দেহঘড়ি ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন একই সময় ঘুমান।
দেহঘড়ি কী
দেহের একটি প্রাকৃতিক ঘড়ি রয়েছে, যেটা আলো ও অন্ধকার দেখে ঘুম ও জেগে থাকা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন চারপাশ অন্ধকার হয়, তখন শরীর মেলাটোনিন হরমোন তৈরি করে ঘুমের প্রস্তুতি নেয়। সাধারণভাবে, সন্ধ্যার পর মেলাটোনিন বাড়তে শুরু করে এবং রাত ২টা থেকে ৪টার মধ্যে বেশি থাকে। ঘুমানোর উপযুক্ত সময় সাধারণত মেলাটোনিন বাড়ার দুই ঘণ্টা পর।
আপনি যদি সারা দিন ক্লান্ত থাকেন, কিন্তু রাতে ঘুম না আসে, তাহলে এটি উপেক্ষা করবেন না। ঘরোয়া কিছু নিয়ম মানলেও যদি ঘুম না আসে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। সঠিক চিকিৎসায় এই সমস্যা দূর হতে পারে। আর স্বস্তি অনুভব করবেন।
সূত্র: হেলথ লাইন