শিরোনাম
বাগেরহাটে আসন কমানোর প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ বিএনপি ও জামায়াতমেলানিয়া পুতিনকে পছন্দ করে: ট্রাম্প৩ আগস্ট শহীদ মিনার থেকে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে: নাহিদজুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রকে সংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে: তাহেরতারেক রহমানের নির্দেশনায় কাউনিয়ায় বিনামূল্যে চিকিৎসা ও চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিতগাজীপুরের একটি সংসদীয় আসন বাড়ল, খুশি নেতারাস্কুলছাত্রী ধর্ষণে অভিযুক্তদের সাজার দাবিতে ঝাড়ু-লাঠিমিছিলসাপুড়ের প্রাণ নেওয়া সাপটিকে চিবিয়ে খেলেন আরেক সাপুড়ে৩৯ আসনের নতুন সীমানা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করল ইসিবড়পুকুরিয়ায় আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে তৃতীয় ইউনিট, ১ নং ইউনিট বন্ধ

নতুন কোম্পানি ছাড়াই কেটে গেল ১৩ মাস

নতুন কোম্পানি ছাড়াই কেটে গেল ১৩ মাস

পুঁজিবাজারে পুঁজির সংকট দিন দিন আরও গভীর হয়ে উঠছে। পুরোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রায় নিঃশেষ। বাজারে প্রাণ ফেরাতে তাঁরা অপেক্ষা করছেন নতুন ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির আগমনের দিকে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা দীর্ঘ সময় ধরে রয়ে গেছে পূর্ণতার ঊর্ধ্বে। একটানা ১৩ মাসে একটি নতুন কোম্পানিও তালিকাভুক্ত হয়নি, যা দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে নজিরবিহীন শূন্যতা।

এই স্থবিরতায় বন্ধ হয়ে আছে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও)-ভিত্তিক নতুন বিনিয়োগের পথ। অথচ ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে জনগণের সঞ্চিত পুঁজি আহরণের অন্যতম ভরসাস্থল হিসেবে পুঁজিবাজারের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু নতুন কোম্পানি না আসায় সেই পথও কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, করপোরেট বন্ড, ট্রেজারি বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড বাদে বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৬৮টি। এর মধ্যে সর্বশেষ আইপিও এসেছিল ২০২৪ সালের জুনে, টেকনো ড্রাগস কোম্পানির। এরপর ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত আর কোনো নতুন কোম্পানি বাজারে আসেনি। এ ধরনের দীর্ঘশ্বাস আগে দেখা যায়নি।

এই শূন্যতার ছাপ পড়েছে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণেও। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ২৮ জুলাই যেখানে বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৫১টি, ২০২৫ সালের একই দিনে তা নেমে এসেছে ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৭-এ। এক বছরে হারিয়ে গেছে প্রায় ৫৯ হাজার হিসাব, যা স্পষ্ট করে দিচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কতটা টালমাটাল।

এ অবস্থায় সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সেই প্রক্রিয়াও এগোচ্ছে ধীরগতিতে। কবে নাগাদ বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন নতুন কোম্পানি আসবে, তা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছেন না। সর্বশেষ ২১ জুলাই রেল ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডকে তালিকাভুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মুমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু বাস্তবায়নের সময়সীমা এখনো অনিশ্চিত।

বিশ্লেষকদের মতে, লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি হলে বাজারে তারল্য বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের নতুন আশার দিগন্ত খুলে যাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে দীর্ঘ সময় আইপিও নেই, ফলে প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগের সুযোগও নেই। ভালো কোম্পানি এলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।’ তবে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, এই মুহূর্তে তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তুত ভালো সরকারি কোম্পানি কয়টি?

অন্যদিকে, সম্প্রতি যেসব নতুন কোম্পানি আইপিওতে এসেছে, তাদের অনেকে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। প্রথম দিকে বড় লভ্যাংশ দিয়ে শুরু করলেও কিছু কোম্পানি পরে তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ক্যাটাগরি নেমে গেছে নিচে এবং শেয়ারের দর ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। টেকনো ড্রাগস, বেস্ট হোল্ডিংস, শিকদার ইনস্যুরেন্স ও ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের মতো কোম্পানির শেয়ারের পতন বিনিয়োগকারীদের আশার বদলে আশঙ্কায় ফেলেছে।

একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলেন, ‘আগে আইপিও মানেই নিশ্চিত লাভ ছিল। এখন কোম্পানি যাচাই না করে লগ্নি করা মানেই ধরা খাওয়া।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা আগে দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়ে ভুল করেছি। এখন আর মানের প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই।’ তবে বিএসইসির এই কড়াকড়িতে ভালো অনেক কোম্পানিও নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ওই কর্মকর্তা।

প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের সিইও মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘নীতির স্থায়িত্ব না থাকায় বিনিয়োগকারীরা আস্থা পান না।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘তিতাস গ্যাস তালিকাভুক্তির পর নীতিমালার পরিবর্তনে কোম্পানির আয় কমে যায়। এর ফলে শেয়ারের দাম ৭০ টাকা থেকে নেমে আসে ৪০ টাকায়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য আল-আমিন বলেন, ‘আগে আইপিও প্রক্রিয়া ছিল খুব ধীর। আমরা সংস্কারের সুপারিশ করেছি। কমিশন কিছুটা সক্রিয় হলেও, বাস্তবে ভালো কোম্পানি আনতে হলে আরও আন্তরিকতা জরুরি।’

এ প্রসঙ্গে বিএসইসির কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘সরকারি মালিকানাধীন ও অংশীদারত্বে থাকা কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে শিল্প, বাণিজ্য ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘কমপ্লায়েন্স ও করপোরেট গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করা গেলে ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পাবে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করাই আমাদের মূল কাজ।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button