জিনিসপত্র নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন অনেকে


রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লির বাসিন্দাদের অনেকে ভয়ে তাদের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবু স্থানীয় লোকজনের ভয় কাটছে না। ফলে তারা বিভিন্ন স্থান ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছে। আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে।
দেখা যায়, গ্রামটিসহ আশপাশের লোকজনের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। তারা তাদের গরু-ছাগল ও বাড়িতে থাকা আসবাবপত্র অন্যত্রে সরিয়ে নিচ্ছে।
এ সময় কথা হয়, শংকর রায় নামের একজনের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুপুরে শুনতে পারলাম, আজকেও তারা নাকি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালাবে। এ জন্য গরু-ছাগলগুলো নিয়ে আমার এক দিদির বাসায় রাখতে যাচ্ছি। গতকালের থেকে আজকে আরও বেশি ভয় লাগতেছে। গতকালও তো পুলিশের সামনে আমাদের ঘরবাড়িগুলো ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। আজকে যদি আবার আগুন দেয়, তাহলে তো কিছুই পাব না। এ জন্য আগেভাগে সবকিছু সরিয়ে নিচ্ছে সবাই।’
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক বাড়িতে গেলে কথা হয় বাড়ির মালিক নারায়ণ মহন্তের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে অপরাধ করেছে, তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু একজনের অপরাধের দায়ভার কেন আমাদের পুরো গ্রামবাসীর ওপর দেওয়া হলো? আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করে খাই, অনেক কষ্ট করে বাড়িটি সাজিয়েছি। তারা মানববন্ধন ও মিছিল করবে বলে এসে পুলিশের সামনে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। এ সময় পুলিশ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে, তারা ভয়ে সামনে আসেনি। আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর এত অত্যাচার কেন। আমরা চাই, এর সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একটু আগে শুনলাম, তারা নাকি আজকেও আমাদের গ্রামে অগ্নিসংযোগ চালাবে, তাই ভয়ে লুটপাট হয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট জিনিসপত্র আত্মীয়ের বাড়িতে রাখতে যাচ্ছি।’
সংকর রায় ও নারায়ণ মহন্তই নন, ওই গ্রামসহ আশপাশের প্রায় ১০০ পরিবার ভয়ে বাড়ি ছাড়ছে। তাদের চোখেমুখে এখন হতাশার ছাপ।

দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রাখছি, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য। এ দেশ সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের, আমরা চাই না এ দেশে এ ধরনের উগ্রপন্থী লোকজন থাকুক। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রাখব, তারা যেন দুষ্কৃতকারীদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসে।’
এর আগে শনিবার ফেসবুকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের একটি গ্রাম থেকে তাঁকে আটকের পর গতকাল রোববার গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এদিকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পাশের এলাকা থেকে লোকজন এসে এক দফায় ওই যুবকের বাড়ি মনে করে অন্য একজনের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। আরেক দফায় হিন্দুপল্লিতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এতে ১৮টির মতো পরিবারের ঘরবাড়ি তছনছ করা হয়। এ ঘটনার পর আতঙ্কে ৫০টির মতো পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লিতে এ ঘটনা ঘটে।

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, ‘গতকালের ঘটনার বিষয় এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত আছেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘আর যাতে এ ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে, এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য শুকনো খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য টিনের ব্যবস্থা করেছি।’