ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা নেই: পার্লামেন্টে জয়শঙ্কর


ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক সংঘাত নিরসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনোভাবেই ভূমিকা রাখেননি বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, গত ২২ এপ্রিলে পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ১৭ জুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে কোনো কথোপকথন হয়নি। আর কোনো পর্যায়েই চলমান ঘটনার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার কোনো যোগ ছিল না।
আজ সোমবার (২৮ জুলাই) ভারতের সংসদে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক চলাকালে এসব কথা বলেন জয়শঙ্কর। তাঁর এই মন্তব্যে ট্রাম্পের দাবি পুরোপুরি খণ্ডিত হলো। খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনিই নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছেন। তিনি আরও দাবি করেন, পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর শুরু হওয়া এই সংঘাত থামাতে বাণিজ্য চুক্তির প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। তবে ভারত ট্রাম্পের এই দাবি বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্থতা করতে দেওয়ার কথাও নাকচ করেছে নয়াদিল্লি। প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেও জুনের মাঝামাঝি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে স্পষ্ট করেন, জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ নিয়ে মধ্যস্থতার প্রশ্নই আসে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেছিলেন, ‘আমি বলেছিলাম, ভাইসব, পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র না ছুড়ে তোমরা বরং নিজেদের তৈরি করা দারুণ সব পণ্য বিনিময় করো।’ তাঁর দাবি, ‘ভারত-পাকিস্তান সমস্যা আমি ঠিকঠাক মিটিয়ে দিয়েছি।’
তবে জয়শঙ্কর তাঁর আগের অবস্থানেই অনড়। তিনি বলেন, ‘১ জুলাই ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স যখন ফোন করেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ছিলাম। সে সময় যে আলাপ হয়, তাতে বাণিজ্য ও যুদ্ধবিরতির মধ্যে কোনো যোগসূত্র ছিল না।’
এ ছাড়া ১ জুলাই এক মার্কিন পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর জানান, ৯ মে রাতে মোদি ভ্যান্সকে ফোন করে বলেন, পাকিস্তান একটি ‘ভয়াবহ হামলার’ পরিকল্পনা করছে। এরপর কয়েক সপ্তাহ কেটে গেলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীই শান্তি আলোচনার জন্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জয়শঙ্কর আরও জানান, পরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাঁকে জানান, পাকিস্তান এখন আলোচনায় রাজি। এরপরই পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের ডিজিএমও ভারতের কাছে শান্তির প্রস্তাব পাঠায়।
বিদেশি প্রভাবের অভিযোগের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি কেউ বাইরে থেকে নির্ধারণ করে না। তিনি বলেন, ‘পেহেলগামে হামলার পর আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জরুরি ছিল। এটি ছিল একটি স্পষ্ট বার্তা—ভারত তাদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদ সহ্য করে না।’
তবে সংসদে তাঁর বক্তব্য চলাকালেই বিরোধীরা একাধিকবার বাধা দেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে বক্তব্য দেন।
জয়শঙ্কর আরও জানান, হামলার পর কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা পাঠানো হয় এবং ১৯৬০ সালের গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিচুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া ভারতের অবস্থান বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের যুক্তরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে পাঠানো হয়। তাঁরা সেখানে ভারতের নতুন সন্ত্রাসবাদবিরোধী নীতির কথা ব্যাখ্যা করেন।
জয়শঙ্কর জানান, জাতিসংঘের ১৯০টি সদস্য দেশের মধ্যে মাত্র তিনটি দেশ ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর বিরোধিতা করেছে। বিশ্ব সম্প্রদায় বিশ্বাস করেছে—ভারত আক্রান্ত হয়েছে এবং আত্মরক্ষার অধিকার ভারতের রয়েছে।
সংসদে বক্তব্যের শেষে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমাদের মিত্র দেশগুলোকে স্পষ্টভাবে দুটি বার্তা দেওয়া হয়েছে—প্রথমত, সন্ত্রাসবাদ নিরসনে আমাদের জিরো টলারেন্স এবং নিজেদের জনগণকে রক্ষার অধিকার আমাদের আছে।’