১ আগস্টই কার্যকর হবে ট্রাম্পের শুল্ক, এখনো চুক্তি অধরা বাংলাদেশের


যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক কার্যকরের যে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেদিন থেকেই তা কার্যকর হবে। আর সময়সীমা বাড়ানো হবে না। অর্থাৎ, আগামী ১ আগস্ট থেকেই এটি কার্যকর হবে। তবে, হাতে মাত্র ৩ দিন বাকি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে, মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শুল্ক কার্যকর হলেও আলোচনার সুযোগ থাকবে।
হাওয়ার্ড লুটনিক স্থানীয় সময় গতকাল রোববার ফক্স নিউজ সানডে অনুষ্ঠানে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপের জন্য ঘোষিত ১ আগস্টের সময়সীমা চূড়ান্ত। এই সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না, ওই দিন থেকেই শুল্ক কার্যকর হবে।
লুটনিক বলেন, ‘কোনো বাড়তি সময় নয়, আর কোনো গ্রেস পিরিয়ড নয়। ১ আগস্ট থেকে শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। কাস্টমস অর্থ সংগ্রহ শুরু করবে, এরপর আমরা এগিয়ে যাব।’ তবে শুল্ক কার্যকর হওয়ার পরও আলোচনার পথ খোলা থাকবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, নির্ধারিত সময়সীমার আগেই পাঁচটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে। দেশগুলো হলো—যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও জাপান। সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই এখনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি। এই পাঁচটি দেশ যে হারে শুল্কে সম্মত হয়েছে, তা গত এপ্রিলে ঘোষিত ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্কের চেয়েও বেশি। তবে যেসব দেশ চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি, তাদের ওপর যে মাত্রার শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন, তার তুলনায় এসব শুল্ক অনেকটাই কম।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে, সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে নিজেদের দিকে টানতে এবং ঘোষিত পাল্টাপাল্টি শুল্ক কমাতে দর-কষাকষির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে দেশটি থেকে বেশি পরিমাণে গম, তুলা ও সয়াবিন আমদানিতে আগাম চুক্তি হয়েছে। তবে এতেও ট্রাম্পের মন গলবে কি না, সংশয় রয়েছে। তাই মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫ উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। বড় কেনাকাটার এমন প্রতিশ্রুতি ঘোষণার পর শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি তিন দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। আলোচনায় থাকবে উচ্চ শুল্কহার, বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য নিয়ে সরাসরি দর-কষাকষি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাল্টা শুল্ক কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বেশ কিছু কৌশলগত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি বিমান কেনার অর্ডার, দেশটি থেকে প্রতিবছর ৭ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি এবং তুলা ও সয়াবিন আমদানি তিন গুণ বৃদ্ধির ঘোষণা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০ কোটি ডলারের ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়। সেটি বাড়িয়ে ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজারের বাস্তবতা মাথায় রেখে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থে আলোচনা করছি। এখন কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পালা, যাতে পাল্টা শুল্কের চাপ কিছুটা কমানো যায়।’ তিনি বলেন, ‘আগে ১৪টি বোয়িং কেনার অর্ডার থাকলেও এখন তা বাড়িয়ে ২৫টি করা হয়েছে।
পাশাপাশি গম, তুলা ও সয়াবিন আমদানিতে আগাম চুক্তি হয়েছে। এটি শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, সরবরাহ চেইন নিরাপদ রাখতে এবং বিকল্প বাজার গড়ে তুলতে এই সিদ্ধান্ত। এতে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সহজ হবে বলে আশা করছি।’
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রতিশ্রুতি কোনো একতরফা নির্ভরতার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য উৎস থেকেও আমদানির সুযোগ থাকবে। তবে এখন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে মার্কিন শুল্কহার কমানোর বিষয়টি। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক দিয়ে বাজার ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিটি অনুচ্ছেদের জবাব দিয়েছি। এবার সময় এসেছে সরাসরি আলোচনার। চীনের বাজার থেকে সরানো কিছু উৎপাদন বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে। আমরা তা ধরতে চাই।’
এদিকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ যে অবস্থানে রয়েছে, তা ধরে রাখতে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগীদের মতো শুল্কছাড় দরকার। তা না হলে এই বাজার হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।