‘চীনপন্থী’ এমপিদের অপসারণে তাইওয়ানের সংসদে বিতর্কিত ভোট


তীব্র আন্দোলনের মুখে তাইওয়ানে একটি নজিরবিহীন ও বিতর্কিত ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ শনিবার হওয়া এই ভোটের লক্ষ্য ছিল ‘চীনপন্থী’ বলে অভিযুক্ত আইনপ্রণেতাদের অপসারণ করা। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দাবামিয়ান’ বা ‘গ্রেট রিকল’ (অপসারণ) নামক এই আন্দোলন একটি নাগরিক আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এটি তাইওয়ানের ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে।
গত জানুয়ারি ২০২৪-এর নির্বাচনের পর থেকে তাইওয়ানের রাজনীতিতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) উইলিয়াম লাই নির্বাচিত হলেও পার্লামেন্টের আইনসভায় (লেজিসলেটিভ ইউয়ান) বিরোধী কুওমিনতাং (কেএমটি) এবং তাদের মিত্ররা সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে সরকার ও আইনসভার মধ্যে কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে।
পরবর্তী মাসগুলোতে প্রধান বিরোধী দল কুওমিনতাং, ছোট দল তাইওয়ান পিপলস পার্টি এবং স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতারা মিলে ডিপিপির বিলগুলোকে আটকে দেয় এবং বেশ কিছু বিতর্কিত আইন পাস করে। এসব পদক্ষেপ কিছু তাইওয়ানিজ নাগরিককে ক্ষুব্ধ করে। এরা মনে করে, এটি ডিপিপি সরকারকে বাধাগ্রস্ত করার এবং বিরোধী দলের সংসদীয় ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা।
এরই অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের মে মাস থেকে হাজার হাজার মানুষ তাইপেতে ‘ব্লুবার্ড আন্দোলন’ নামে প্রতিবাদ শুরু করে। এই আন্দোলনের অনেক কর্মী বিশ্বাস করেন, বিরোধী দল কুওমিনতাং চীনের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং তারা বেইজিং দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। তারা তাইওয়ানের আইনসভায় গোপনে চীনের অ্যাজেন্ডাও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তবে কুওমিনতাং এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও গত বছর কুওমিনতাংয়ের একদল আইনপ্রণেতার চীন সফর এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ওয়াং হুনিং কর্তৃক তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা সন্দেহ আরও গভীর করে।
ব্লুবার্ড আন্দোলনের অনেক কর্মী কুওমিনতাং আইনপ্রণেতাদের অপসারণের জন্য পিটিশন শুরু করে। জবাবে কুওমিনতাং সমর্থকেরা কিছু ডিপিপি আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়। তবে এখন পর্যন্ত ৩১ জন কুওমিনতাং আইনপ্রণেতার আসনের জন্য পিটিশনগুলো চূড়ান্ত ‘অপসারণ’ ভোটের জন্য পর্যাপ্ত প্রাথমিক সমর্থন পেয়েছে।
আজকের ভোটে, ২৪টি জেলার নাগরিকেরা তাঁদের আইনপ্রণেতাকে অপসারণ করতে চান কি না, সে বিষয়ে একটি হ্যাঁ/না প্রশ্নে ভোট দিয়েছেন। বাকি আইনপ্রণেতাদের অপসারণের জন্য আগস্ট মাসে আরও একটি ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিটি জেলায়, যদি ভোটের সংখ্যা নিবন্ধিত ভোটারের ২৫ শতাংশের বেশি হয় এবং অর্ধেকের বেশি ভোটার ‘হ্যাঁ’ বলেন, তবে সেই আসন শূন্য ঘোষিত হবে। এরপর তিন মাসের মধ্যে সেখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমন পরিস্থিতিতে ‘গ্রেট রিকল’-এর সাফল্যের জন্য ভোটারের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী ব্লুবার্ড আন্দোলনের অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং রাস্তায় নেমে কুওমিনতাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। অন্যদিকে, কুওমিনতাং এবং তাদের মিত্ররা ভোটারদের ‘না’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সমাবেশ করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, ডিপিপি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে আইনসভায় (লেজিসলেটিভ ইউয়ান) ক্ষমতা দখলের জন্য ‘গ্রেট রিকল’ এবং ব্লুবার্ড আন্দোলনকে মদদ দিচ্ছে।
ডিপিপি প্রাথমিকভাবে ‘গ্রেট রিকল’ আন্দোলন থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু অবশেষে তারা এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট লাই জোর দিয়ে বলেছেন, ডিপিপিকে ‘জনগণের শক্তির সঙ্গে একত্র হতে হবে’ এবং দলের কর্মকর্তাদের ‘জাতিকে রক্ষা’ করার জন্য এই আন্দোলনকে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন।