নিজের চিত্রকর্ম পুড়িয়ে সন্তানদের খাবার জোগাচ্ছেন গাজার শিল্পী


গাজার হৃদয়বিদারক বাস্তবতার ছবি তুলে ধরেছেন একজন ফিলিস্তিনি শিল্পী। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, সন্তানদের মুখে এক বেলার খাবার তুলে দিতে চিত্রশিল্পী তাহা আবু ঘালি নিজের আঁকা ছবি পুড়িয়ে রান্নার জন্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন।
ভিডিওতে চিত্রশিল্পী তাহা বলেন, ‘এই কঠিন সংকটে আমাদের যেন আর কোনো উপায় নেই। আমরা ড্রয়ারে রাখা কাঠের বোর্ডগুলো পুড়িয়ে ফেলছি। কারণ আমাদের কাছে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বা কেরোসিন নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ময়দা খুঁজে পাচ্ছি না। রান্না করার মতো কিছুই নেই। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, এই ছবিগুলো আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ—শিশুদের প্রতিকৃতি, রঙে ভরা গল্প, শিল্প যা একসময় অর্থবহ ছিল। এখন সবই পুড়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সৌন্দর্যও হয়ে যাচ্ছে আগুনের কাঠ।’
শুক্রবার আমিরাত-ভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আল আকসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক তাহা আবু ঘালি একজন অভিজ্ঞ চিত্রশিল্পী ও শিক্ষক। তাঁর এই শিল্পকর্মগুলো তৈরি করতে বহু বছর লেগেছিল। কিন্তু এখন এগুলোই হয়ে উঠেছে একমাত্র ভরসা—রান্না করার কাঠ।
জাতিসংঘের একজন দুর্ভিক্ষ বিশেষজ্ঞ দ্য ন্যাশনালকে জানিয়েছেন, গাজায় চলমান ইসরায়েলি অবরোধের মানসিক ও সামাজিক প্রভাব পুরো প্রজন্ম ধরে বহন করতে হবে।
সম্প্রতি ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, সেভ দ্য চিলড্রেন, অক্সফামসহ ১০০ টিরও বেশি মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দলগত অনাহার ছড়িয়ে পড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, ‘গাজার অধিকাংশ মানুষই এখন অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমি জানি না একে আর কী নামে ডাকবেন—এটা নিছক একটি দলগত অনাহার এবং এটি মানবসৃষ্ট।’
অন্যদিকে ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইসরায়েল সৃষ্টি করেছে এমন কোনো দুর্ভিক্ষ গাজায় নেই। এটা হামাসের তৈরি এক কৃত্রিম সংকট।’
গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবরোধের কারণে গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১১৩ জন মানুষ অনাহারে মারা গেছেন। এদের অধিকাংশই শিশু। ইসরায়েল জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ সামগ্রী, এমনকি শিশুখাদ্যও আটকে রেখেছে।
এ ছাড়া গাজার ২২ লাখ মানুষের প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত। বোমাবর্ষণে মৃত্যুর সংখ্যা ৬০ হাজারের কাছাকাছি, আহত ১ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি এবং জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে অমানবিক, অনিরাপদ ও রোগে পরিপূর্ণ।