রাজস্থানে বাংলাভাষী মুসলিম তরুণ আটক, নাগরিকত্বের প্রমাণ থাকার পরও বাংলাদেশে পুশইন


সব কাগজপত্র ছিল তাঁর কাছে—আধার, ভোটার কার্ড, এমনকি আত্মীয়দের পরিচয়পত্রও। তবু রাজস্থান পুলিশ বিশ্বাস করল না যে সে ভারতীয়। এরপর, এক সকালে চোখ খুলে দেখল, সে আছে অন্য এক দেশে, বাংলাদেশে। আর এখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমির শেখ নামক ওই তরুণকে দেশে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ২০ বছর বয়সী আমির শেখ, পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার কালিয়াচক ১ নম্বর ব্লকের জলালপুর গ্রামের বাসিন্দা। বড় একটা স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন রাজস্থানে। আশা ছিল সেখানে কাজ পাবেন, পরিবারের হাল ধরবেন। কিন্তু তার বদলে জুটেছে অপমান, বন্দিত্ব আর দেশছাড়া হওয়ার যন্ত্রণা।
রাজস্থান পুলিশ ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ‘অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে আমির খানকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিতে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে মালদা জেলা প্রশাসন। পাঁচ দিন আগে রাজস্থান থেকে বাংলাদেশে ‘পুশইনের’ শিকার হয়েছেন আমির।
ঘটনার পর আমির শেখের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাতে দেখা যায়, লাল গেঞ্জি ও নীল জিনস পরা আমির কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের দুর্দশার কথা বলছেন। ভিডিওতে তিনি নিজেকে মালদার জলালপুর গ্রামের আমির শেখ বলে পরিচয় দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
ভিডিওতে আমির বলেন, ‘দুই মাস আগে কাজের খোঁজে রাজস্থানে যাই। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই রাজস্থান পুলিশ আমাকে ধরে। তারা বলে, আমি ভারতীয় কি না তা প্রমাণ করতে হবে। আমি আধার কার্ড, ভোটার আইডিসহ সব নথিপত্র দেখাই। এমনকি আত্মীয়দেরও কাগজ দেখাই। কিন্তু পুলিশ তাতে সন্তুষ্ট হয়নি। তারা আমাকে তিন দিন থানায় আটকে রাখে, পরে দুই মাস জেলে পাঠায়।’
আমির আরও বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমাকে জেল থেকে বের করে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারপর বিএসএফ আমাকে সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। আমার বাংলাদেশে কেউ নেই।’
এই ঘটনায় মালদা দক্ষিণের কংগ্রেস এমপি ঈশা খান চৌধুরী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন, ‘একজন প্রকৃত ভারতীয় নাগরিককে এভাবে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা অমানবিক ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ। সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আমিরের পরিবারে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। চোখে জল, মনে ভর করে একটাই প্রশ্ন, ‘কেন এমনটা হলো?’ ছেলে ফিরে আসবে কি না, তা জানেন না তাঁরা, শুধু জানে তাদের সন্তান কখনো দেশের সীমা ছাড়ায়নি বিশ্বাসে বা পরিচয়ে। এই ঘটনার পর মালদা জেলা প্রশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘আমির জলালপুরের বাসিন্দা। তাঁকে ফেরানোর সব রকম সরকারি চেষ্টা চলছে। বিডিও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন।’