শিরোনাম

ইউক্রেনে নজিরবিহীন সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ, পিছু হটলেন জেলেনস্কি

ইউক্রেনে নজিরবিহীন সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ, পিছু হটলেন জেলেনস্কি

যুদ্ধ শুরুর পর পর প্রথম গণবিক্ষোভের মুখে পড়লেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে দুটি প্রধান দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে একটি নতুন আইনের খসড়া পার্লামেন্টে জমা দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এই সংস্থাগুলোর ক্ষমতা খর্ব করার কয়েক দিন পরেই এমন পদক্ষেপ নিলেন জেলেনস্কি।

সম্প্রতি পাস হওয়া একটি আইন ইউক্রেনের ন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন ব্যুরো (নাবু) এবং স্পেশালাইজড অ্যান্টি-করাপশন প্রসিকিউটরস অফিস (সাপ)-কে প্রসিকিউটর জেনারেলের অধীনে নিয়ে আসার বিধান করা হয়। এই প্রসিকিউটর জেনারেলকে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট। এই আইন পাসের পর ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দেখা দেয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ এটি। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং প্ল্যাকার্ড হাতে আইনটি বাতিলের দাবি জানায়। তাদের আশঙ্কা, এই আইন নাবু ও সাপ-এর ক্ষমতা ও কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে।

পশ্চিমা মিত্ররাও এই আইন নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডের লিয়েনের একজন মুখপাত্র কিয়েভকে সতর্ক বলে বলেন, আইনের শাসন এবং দুর্নীতি দমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়ার ‘মূল উপাদান’।

গতকাল বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি তাঁর আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বলেন, নতুন বিলটি নাবু এবং সাপ-এর স্বাধীনতা রক্ষা এবং রাশিয়ার প্রভাব থেকে তাদের সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে প্রণীত। তিনি বিলটিকে ‘সুষম ভারসাম্যপূর্ণ’ বলে অভিহিত করলেও বিস্তারিত কিছু জানাননি। নাবু জানিয়েছে, নতুন বিলটি দুটি সংস্থার ‘সব প্রক্রিয়াগত ক্ষমতা এবং স্বাধীনতার নিশ্চয়তা পুনরুদ্ধার করেছে’।

জেলেনস্কি এর আগে রাশিয়ার প্রভাবের কথা উল্লেখ করে এই সংস্থাগুলোর ক্ষমতা কমানোর সিদ্ধান্তকে ন্যায্য বলে দাবি করেছিলেন। আগের দিনই ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো সংস্থাটিতে কথিত রাশিয়ার গুপ্তচরদের ধরতে তল্লাশি ও গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছিল।

ইউক্রেনের পশ্চিমা অংশীদাররা এই বিল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করার পর সমালোচকদের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। অনেকে জেলেনস্কিকে গণতন্ত্র থেকে পশ্চাদপসরণের অভিযোগ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আইনটি বাতিলের সিদ্ধান্তকে ইউরোপীয় কমিশন ‘স্বাগত’ জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪-১৫ সালে নাবু এবং সাপ প্রতিষ্ঠা ছিল ইউক্রেন এবং ইইউ-এর মধ্যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইউরোপীয় কমিশন এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অন্যতম শর্ত।

বিরোধী এমপি ওলেক্সেই গনচারেঙ্কো জেলেনস্কির পদক্ষেপের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘প্রথমে আমরা (অধিকার ও স্বাধীনতা) কেড়ে নিই, এবং এরপর বলি যে এর গ্যারান্টি দিতে হবে। তাহলে এসবের দরকার কী ছিল?’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া বার্তায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ হিসেবে জেলেনস্কি বিক্ষোভ বা প্রতিক্রিয়ার কথা সরাসরি স্বীকার করেননি। তবে বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনীয়দের অবস্থানকে সম্মান করি এবং ইউক্রেনের পাশে থাকা প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞ।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button