শিরোনাম

আরও ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত, ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণহানি ২০০০ ছুঁইছুঁই

আরও ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত, ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণহানি ২০০০ ছুঁইছুঁই

গাজায় যেন থামছেই না মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত হয়েছে আরও ৭৩ ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে রয়েছে এক শিশুও। কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৯ জন ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বির্তকিত সংগঠন গাজা হিউম্যানিটিরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। এ নিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১ হাজার ৮৩৮ জনে।

গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি হামলার পাশাপাশি অপুষ্টিজনিত কারণে নিহত হয়েছে দুইজন। যাদের একজন ছয় বছর বয়সী এক শিশু এবং অন্যজন ৩০ বছর বয়সী যুবক। এ ছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচ জন অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে গাজায় অনাহারে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়াল ২২৭, যার মধ্যে শিশুই শতাধিক।

গাজার অনাহার পরিস্থিতি ও ত্রাণ প্রবেশ নিয়ে ইসরায়েলি অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে পশ্চিমা ২৬টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে তা অকল্পনীয়। সবার চোখের সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ত্রাণ কখনো রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারে না। মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলো অবশ্যই সুরক্ষিত থাকতে হবে।’

ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকান্ডের কড়া সমালোচনা করা হয়। ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নিন্দা জানায় দেশগুলো। পাশাপাশি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠনগুলোকে গাজায় ত্রাণ বিতরণের অনুমোদন দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানায় তারা।

আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় প্রবেশের অপেক্ষা থাকা সাড়ে চারশতাধিক ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে রেখেছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার, এক বিবৃতিতে গাজা প্রশাসনের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, হিমায়িত মাংস, মাছ, চীজ, দুগ্ধজাতীয় পণ, সবজি এবং ফলের মতো খাদ্যপণ্য গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরায়েল। ওই বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েল কেবল গাজায় ত্রাণ প্রবেশেই বাধা দিচ্ছে না, ফুড ব্যাংকগুলোতে নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৪৪টি ফুডব্যাংকে বোমা হামলা চালিয়েছে আইডিএফ। এ ছাড়া, অর্ধ শতাধিক ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নিয়মিতই বোমাবর্ষণ করে তারা।

ইসরায়েলি হামলা আর অবরোধে যখন গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, তখন গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে শহরটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসা সরঞ্জাম ঢুকতে দিতে ইসরায়েলি প্রশাসনের কাছে আকুতি জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাজা প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেন, ‘ইসরায়েলি প্রশাসন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলছে যে তারা আরও বেশি ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে গাজায়। কিন্তু তেমন কিছু বাস্তবে হচ্ছে না। তার ওপর গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে তারা। এ অবস্থায় গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত কতে চাই আমরা।’

এদিকে, গাজা সিটির সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন গত তিন দিন ধরে গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের মাত্রা বেড়েছে। বোমা, ড্রোনসহ সব ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। উদ্ধার অভিযানগুলোতেও হামলা চালানো হচ্ছে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে ২৪ ঘণ্টায় তাদের এক সদস্য ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে। আল-মাওয়াসিতে চালানো বিমান হামলায় প্রাণ হারান তিনি। ওই হামলায় তার বাবা-মাও নিহত হন বলে জানা গেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩৭ সদস্য হারিয়েছে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button