সৌরচালিত বিমানে ৯৫২১ মিটার উচ্চতায় পৌঁছে সুইস অভিযাত্রীর রেকর্ড


সৌরশক্তি চালিত বিমানে মানব-অভিযাত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন সুইজারল্যান্ডের অভিযাত্রী রাফায়েল ডমজান। দক্ষিণ-পশ্চিম সুইজারল্যান্ডের সিওন শহর থেকে উড্ডয়ন করে তিনি আল্পস পর্বতমালা অতিক্রম করেন এবং ৯ হাজার ৫২১ মিটার (৩১,২৩৪ ফুট) উচ্চতায় পৌঁছান। ৫ ঘণ্টা ৯ মিনিটের এই যাত্রায় উষ্ণ বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী স্রোতও তাঁকে সহায়তা করেছে।
বুধবার রাতে (১৩ আগস্ট) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, রাফায়েল যে উচ্চতায় উঠেছেন, তা ২০১০ সালে সুইস সৌর বিমানের অগ্রদূত আন্দ্রে বোর্শবার্গ ও বের্ট্রান্ড পিকার্ডের ৯ হাজার ২৩৫ মিটার উচ্চতায় পৌঁছানোর রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। তবে নতুন রেকর্ডটি এখনো বিশ্ব এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে।

৫৩ বছর বয়সী রাফায়েল নিজেকে ‘ইকো-এক্সপ্লোরার’ বলে পরিচয় দেন। তিনি প্রমাণ করতে চান—পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি শুধু জীবাশ্ম জ্বালানির সমকক্ষ নয়, বরং তার সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাঁর পরীক্ষামূলক বিমান ‘সোলারস্ট্রাটোস’-এর ২৫ মিটার দীর্ঘ ডানার পৃষ্ঠ জুড়ে সৌর কোষ বসানো আছে। ভবিষ্যতে তিনি এটি দিয়ে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (প্রায় ২৫,০০০ মিটার) পর্যন্ত পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছেন।
দুই আসনের বিমানটি তিনি রুশ-নির্মিত মহাকাশচারী ধাঁচের স্যুট পরে উড্ডয়ন করেন। সফল যাত্রা শেষে তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর প্রস্তুতি নেওয়া এই সাফল্যের মুহূর্ত আমি সবার সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি।’ তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য ১০ হাজার মিটার উচ্চতায় পৌঁছানো। কারণ এই উচ্চতায় সাধারণ বাণিজ্যিক বিমানও চলাচল করে।
সোলারস্ট্রাটোস দেখতে অনেকটা শক্তিশালী গ্লাইডারের মতো, যার দীর্ঘ ডানা গ্রীষ্মের উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ কাজে লাগিয়ে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০ মাইল গতিতে আকাশে ভেসে থাকতে পারে। বিমানটি উড্ডয়নের আগে সূর্যালোক থেকে চার্জ হওয়া ব্যাটারির ওপর নির্ভর করে। তবে আকাশে ওড়ার সময় এর সঙ্গে যুক্ত সৌর কোষগুলো ব্যাটারির ক্ষয় কমিয়ে দেয়।
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পরও ভারী লিথিয়াম ব্যাটারি দীর্ঘমেয়াদি বৈদ্যুতিক উড্ডয়নের পথে বড় বাধা। এর ফলে সৌরশক্তিচালিত বিমানের উন্নয়ন ধীর গতিতে এগোচ্ছে। তবুও ২০০১ সালে ‘হেলিওস’ নামে নাসার মানববিহীন সৌর-বৈদ্যুতিক বিমান ৩০ হাজার মিটার উচ্চতায় পৌঁছেছিল।
রাফায়েল ডমজান একসময় ট্যাক্সি চালাতেন। এ ছাড়া পর্বত উদ্ধারকর্মী ও হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তাঁর সৌরশক্তিচালিত নৌযান ‘প্ল্যানেটসোলার’ সারা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছিল।
ক্রাইম জোন ২৪