গবাদিপশু ও পোলট্রির ‘হিট স্ট্রেস’ নিয়ন্ত্রণে নতুন এআই সিস্টেম উদ্ভাবন


ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক শিক্ষার্থীর উদ্ভাবিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (AI) একটি সিস্টেম খামারে গবাদিপশু ও পোলট্রির ‘হিট স্ট্রেস’ নিয়ন্ত্রণে দারুণ সাফল্য এনেছে। এই নতুন প্রযুক্তি খামারের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি প্রাণীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করবে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পোলট্রি খামারে এটি সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার অতিরিক্ত চাপ গবাদিপশু ও পোলট্রির উৎপাদন কমিয়ে দেয়, রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং অনেক সময় প্রাণীর মৃত্যুও ঘটায়। দেশের ছোট ও মাঝারি খামারিরা এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই বাকৃবির পশুপালন অনুষদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আল মোমেন প্রান্ত এই এআই সিস্টেম তৈরি করেছেন। এটি মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই হিট স্ট্রেস শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার মাসের প্রচেষ্টায় এই সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। প্রান্তিক খামারিদের কথা মাথায় রেখে এর বাজারমূল্য ধরা হয়েছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা।
যেভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি
এই সিস্টেমে সহজলভ্য পরিবেশগত সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রাণীর আশপাশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপ করে। এই তথ্যগুলো ‘ইন্টারনেট অব থিংস’-এর (IoT) মাধ্যমে ক্লাউডে পাঠানো হয়। এরপর এটি তাপমাত্রা-আর্দ্রতা সূচক (THI) ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে হিট স্ট্রেসের মাত্রা নির্ধারণ করে।
সিস্টেমের মধ্যে থাকা এআই মডেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। যদি হিট স্ট্রেস বেশি হয়, তবে সিস্টেমটি নিজে থেকেই এক্সহস্ট ফ্যান বা কুলিং প্যাড চালু করে দেয়। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে খামারের পরিবেশ দ্রুত শীতল হয় এবং প্রাণীরা আরাম পায়।
গবেষক আল মোমেন প্রান্ত বলেন, ‘উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে প্রাণিসম্পদে হিট স্ট্রেস তৈরি হয়, যা দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনার জন্য হিট স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি সেন্সর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পরিবেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়, যা প্রাণীর জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।’ তিনি আরও বলেন, এই প্রযুক্তি প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের সুস্থতাও নিশ্চিত করবে।

এই গবেষণা বাকৃবির পশুপালন অনুষদের সিনিয়র অধ্যাপক ড. রকিবুল ইসলাম খান এবং সহকারী অধ্যাপক এস এম আরিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছে।
ড. রকিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই প্রযুক্তি খামার ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এটি শ্রম ও বিদ্যুতের খরচ কমিয়ে দেবে এবং তথ্যের অভাবে খামারিদের যে ক্ষতি হয়, তা এড়াতেও সাহায্য করবে।’ তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি খামারে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা এর সুফল পেয়েছেন।
ক্রাইম জোন ২৪