যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন রপ্তানিতে চীনকে পেছনে ফেলে শীর্ষে ভারত


যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন রপ্তানিতে প্রথমবারের মতো চীনকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে ভারত। চীনের সঙ্গে শুল্কসংক্রান্ত অনিশ্চয়তায় দেশটির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এখন ভারতের দিকে ঝুঁকছে অ্যাপল। এ কারণেই ভারত চীনকে টেক্কা দিতে পেরেছে বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিস।
সম্প্রতি প্রকাশিত ক্যানালিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া স্মার্টফোনের ৪৪ শতাংশই ভারতে তৈরি। আগের বছরের একই সময়ে এই হার ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ। সেই হিসাবে ভারত থেকে রপ্তানি করা স্মার্টফোনের পরিমাণ বছরে ২৪০ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে, চীনে তৈরি স্মার্টফোনের মার্কিন বাজারে অংশীদারত্ব কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশে, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬১ শতাংশ। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন রপ্তানিতে চীন নেমে গেছে তৃতীয় অবস্থানে। ভারতের পরেই রয়েছে ভিয়েতনাম।
ক্যানালিসের প্রধান বিশ্লেষক সন্যম চৌরাসিয়া জানান, ‘এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো অ্যাপলের উৎপাদন সরিয়ে ভারতের দিকে ঝোঁকা। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার অস্থির বাণিজ্য সম্পর্কের কারণে এ সিদ্ধান্ত এসেছে।’
চৌরাসিয়া আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছরে অ্যাপল ভারতীয় উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং এখন পর্যন্ত মূলত মার্কিন বাজারের জন্যই তারা ভারতের রপ্তানি সক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছে।’
তবে এখনো অ্যাপলের অনেক উৎপাদনকেন্দ্র চীনের ওপর নির্ভরশীল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ থেকে অ্যাপলের অনেক পণ্য, যেমন—আইফোন ও ম্যাক ল্যাপটপ ছাড় পেয়েছে। এসব ডিভাইসের ওপর বর্তমানে কমপক্ষে ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য।
গত মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, ‘আমি প্রত্যাশা করি, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ আইফোন ভারতের তৈরি হবে।’
চীনের বাইরে সম্ভাবনা খোঁজে অ্যাপল
ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ শুল্কনীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় উৎপাদন পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চলছে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে চীনের ওপর। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। পাল্টা জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তবে মে মাসে উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য এসব শুল্ক প্রত্যাহারে সম্মত হয়।
চলতি সপ্তাহে সুইডেনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য আলোচকেরা এই সাময়িক মীমাংসা দীর্ঘায়িত করতে বৈঠকে বসেছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান না হওয়ায় অনেক উৎপাদক প্রতিষ্ঠান চীনের বাইরে বিকল্প খুঁজছে।
বিশেষ করে মহামারির সময় চীনের ‘জিরো কোভিড’ নীতি বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনকে বড় ধরনের ধাক্কা দেয়। তখন থেকেই বৈচিত্র্যপূর্ণ উৎপাদনকেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ বাড়তে থাকে।
ক্যানালিস জানায়, ‘চীনের সঙ্গে আলোচনা অনিশ্চিত হওয়ায় উৎপাদন সরিয়ে নিতে নির্মাতারা এখন আরও আগ্রহী হয়ে উঠছে।’
ভিয়েতনাম ও ভারতের মতো দ্রুতবর্ধনশীল এশীয় অর্থনীতিগুলো এখন চীনের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন