তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পিছিয়ে ২৮ আগস্ট


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে গণপিটুনি দিয়ে তোফাজ্জলকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ২৮ আগস্ট ধার্য করা হয়েছে।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান আজ রোববার এ তারিখ ধার্য করেন বলে নিশ্চিত করেছেন আদালতের শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা জিন্নাত আলী।
এদিন তোফাজ্জল হত্যার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিল না করায় আদালত নতুন এ তারিখ ধার্য করেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজর মোহাম্মদ আমানুল্লাহ দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন; যা বিবেচনায় নিয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
নারাজি আবেদনে বলা হয়, মামলার তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি। ৬ জন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের জবানবন্দি অনুযায়ী সুলতান আহমেদ রকিসহ আটজন এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁদের নাম অভিযোগপত্রে বাদ দিয়েছেন। এতে বিচারপ্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে অভিযোগের আরও তদন্ত হওয়া দরকার।
অবশ্য মামলার আরেক বাদী তোফাজ্জলের ফুফাতো বোন মোসা. আসমা আক্তার মামলার বিচার শুরুর আবেদন জানিয়েছিলেন।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজর মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান। তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২১ জন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়।
তাঁরা হলেন ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ, ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ, ওয়াজিবুল আলম, ফিরোজ কবির, আব্দুস সামাদ, শাকিব রায়হান, ইয়াসিন আলী, ইয়ামুজ্জামান ইয়াম, ফজলে রাব্বি, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান, রাতুল হাসান, সুলতান মিয়া, নাসির উদ্দিন, মোবাশ্বের বিল্লাহ, শিশির আহমেদ, মহসিন উদ্দিন ও আব্দুল্লাহহিল কাফি।
তাঁদের মধ্যে প্রথম ছয়জন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
মামলার এজাহারে আমানুল্লাহ বলেন, ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন এক যুবক। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাঁকে আটক করে প্রথমে হলের মূল ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে যান। মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে তাঁরা তাঁকে চড়-থাপ্পড়, কিলঘুষি মারেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক তাঁর নাম তোফাজ্জল বলে জানান। পরে তিনি মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাঁকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। এরপর তাঁকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে মারধর করেন কয়েকজন ছাত্র। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার কয়েকদিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শাহ মুহাম্মদ মাসুমসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন নিহতের ফুফাতো বোন আসমা আক্তার। তাঁর জবানবন্দি নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা মামলা একসঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।