শিরোনাম

দেখতে জ্যান্ত শিশুর মতো, পশ্চিমে দেদার বিক্রি হচ্ছে ১২ লাখ টাকার পুতুল

দেখতে জ্যান্ত শিশুর মতো, পশ্চিমে দেদার বিক্রি হচ্ছে ১২ লাখ টাকার পুতুল

আদরের নাওমিকে গাড়ির সিটে বসিয়ে শপিং মলে যান কেলি ম্যাপল। সেখানে পৌঁছে তাকে একটি দামী প্যারাম্বুলেটরে বসান ২৩ বছরের এই নারী। প্যারাম্বুলেটরে আছে বহনযোগ্য সাউন্ড মেশিন, টেডি বিয়ারের মতো নরম খেলনা আর চুষনি। এরপর মনের সুখে একসঙ্গে কেনাকাটা করতে থাকেন ম্যাপল আর নাওমি। বেশির ভাগ মানুষই তাদের দেখে মা-মেয়েই ভাববে।

আসলে কিন্তু তা না। নাওমি ম্যাপলের মেয়ে নয়। মেয়ে তো দূরের কথা, আসলে সে মানুষই না।

নাওমি আসলে মানুষের মতো দেখতে পুতুল, যার মূল্য ৮-১০ হাজার ডলার। একবিংশ শতকের শুরুর দিকে বাজারে এলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই পুতুলগুলো বৈশ্বিক আলোড়নে পরিণত হয়েছে। যারা তাদের কেনে, তারা পুতুলগুলোকে নিজেদের সন্তানের মতোই স্নেহ করে।

ব্রাজিলে সম্প্রতি বিষয়টি এতটাই আলোচনায় এসেছে যে, রাজনীতিকেরা জনপ্রিয় এসব পুতুলকে জনসমাগমস্থলে নিষিদ্ধ করার জন্য বিল পর্যন্ত উত্থাপন করেছেন।

এক প্রতিবেদনে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এসব পুতুল যাদের রিবর্ন ডল বলা হয়, তাদের জগৎ সবার চোখের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে। সেখানে এটি একটি কুটির শিল্প। অপেশাদার কারিগরেরা তাঁদের বাড়ির বেসমেন্টে এসব পুতুল তৈরি করেন, তাতে রঙ লাগান। এই প্রক্রিয়া, বিশেষ করে, আরও বাস্তবসম্মত সিলিকন পুতুলের ক্ষেত্রে, অত্যন্ত শ্রমসাধ্য। তাদের কোমল পিচ্ছিল ত্বকে হালকা নীল শিরার আঁকিবুঁকি আঁকা হয় আর মাথা ও ভ্রুতে ছাগল বা আলপাকা পশুর লোম বসানো হয়, যা দেখে আসল আর নকল বোঝা মুশকিল।

যে শিশুরা কখনোই কাঁদে না

রিবর্ন ডলের দুনিয়ায় কেলি ম্যাপল অন্যতম তারকা। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার ২০ লাখের বেশি। তিনি যে পুতুল বানান, তার দাম হাজার হাজার ডলার পর্যন্ত ওঠে। ‘ডলস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এক্সপোর মতো আন্তর্জাতিক পুতুল মেলায় সেলফি আর অটোগ্রাফের জন্য ভক্তরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। মেলায় নিজের স্টল সাজাতে যে পুতুলগুলো বিক্রি করবেন, সেগুলোর কাজ করতে তিনি মাসের পর মাস কাটান একটি ঘরে, যার নাম তিনি দিয়েছেন ‘নার্সারি’।

ম্যাপল হেসে বলেন, ‘নার্সারিতে মাথা আর হাত-পায়ের অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। দেখতে একটু ভয়ই লাগে।’

আর দশটা শিশুর মতো দেখতে এই পুতুলগুলো সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা এখন তুঙ্গে।

হাতে তৈরি পুতুল বিক্রির অন্যতম বড় অনলাইন বাজার রিবর্নস ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ডেভ স্ট্যাক বলেন, এই বাজার ক্রমেই বড় হচ্ছে। আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

পুতুল নির্মাতাদের তাদের পুতুল সাইটে বিক্রি করার জন্য তিনি প্রতি মাসে ৩০ ডলার করে নেন এবং তার প্রায় ৬০০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছেন।

এই নির্মাতাদের অনেকেই সম্প্রতি উপস্থিত ছিলেন নর্থ ক্যারোলিনায় একটি মেলায়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের হাতেগোনা কয়েকটি মেলার একটি, যেখানে পুতুলপ্রেমী ও বিক্রেতারা পুতুল কেনাবেচা করতে এবং পুতুল তৈরির শিল্প নিয়ে ক্লাস করতে একত্র হন।

সন্ধ্যায় আয়োজনে নারীরা একে অপরের সঙ্গে চুষনি আর পুতুলের পোশাকের মতো উপহার বিনিময় করেন। সেরা শিল্পীদের দেওয়া হয় পুরস্কার।

এই মেলা চলছিল এক বিশাল কমপ্লেক্সে, যেখানে একই সঙ্গে আরও দুটি সম্মেলন হচ্ছিল। পুতুলপ্রেমীরা জায়গা ভাগাভাগি করেছিলেন ওয়ার্ল্ড নিনজা লিগ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণকারী ও কসমিক সামিটের ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসীদের সঙ্গে।

পুতুল মেলা দেখে কসমিক সামিটে অংশগ্রহণকারী ওশান নরিস বলেন ‘আমরা সবাই ভেবেছিলাম, তারা সত্যিকারের শিশু। যখন দেখলাম তারা একটুও কান্নাকাটি করছে না, তখন আমাদের ভুল ভাঙে।’

তাঁর বন্ধু, নর্থ ক্যারোলিনার বাসিন্দা অ্যাঞ্জেলা সিমন্স বলেন, ‘পুতুলগুলোর সঙ্গে সত্যিকারের শিশুর মতো ব্যবহার আমাকে অবাক করে।’

প্রশ্ন উঠতে পারে, এত দাম দিয়ে এসব পুতুল মানুষ কিনছে কেন?

আসলে যেসব নারী সন্তান হারিয়েছেন বা যাঁদের গর্ভপাত হয়েছে, তাঁদের এই পুতুলগুলো একধরনের মানসিক শান্তি দেয়। এ ছাড়া পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি), আলঝেইমার, ডিমেনশিয়া, অটিজমে আক্রান্ত নারীরা এ ধরনের পুতুলে আশ্রয় খুঁজে পান। ব্রিটনি স্পিয়ার্সের মতো তারকা, যাঁর গর্ভপাতের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁকেও এমন পুতুল হাতে দেখা গেছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button