শিরোনাম
ভারতের হরিদ্বারে মনসা দেবীর মন্দিরে পদদলনে ৭ জনের মৃত্যু, আহত ৫৫সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে নিয়ে ফেসবুক পোস্টে যা বললেন সারজিসরাজস্থানে বাংলাভাষী মুসলিম তরুণ আটক, নাগরিকত্বের প্রমাণ থাকার পরও বাংলাদেশে পুশইনগার্দিওলাও হতে চেয়েছিলেন ভারতের কোচ, ফেডারেশন বলছে ভুয়ানিষেধাজ্ঞার পর বৈরী আবহাওয়া, হাতিয়ার লক্ষাধিক জেলে পরিবার দুশ্চিন্তায়বিশ্বব্যাপী এআই সহযোগিতা বাড়াতে আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব চীনেরনেত্রকোনায় এনসিপির কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা, যুবলীগ নেতা আটকইইউতে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বন্ধের কারণ জানাল মেটাভোলায় অস্ত্রসহ ৮ ডাকাত গ্রেপ্তারদুর্ভিক্ষে চলৎশক্তিহীন গাজাবাসী, লবণপানিই একমাত্র খাবার

‘বাবা, ভালো হয়ে যাব, তুমি টেনশন কইরো না’, দগ্ধ শিশু মাহতাবের শেষ কথা

‘বাবা, ভালো হয়ে যাব, তুমি টেনশন কইরো না’, দগ্ধ শিশু মাহতাবের শেষ কথা

‘বাবা, আল্লাহর রহমতে আমি ভালো হয়ে যাব, তুমি কোনো টেনশন কইরো না।’ দগ্ধ শরীরে বেডে শুয়ে কাতরাতে কাতরাতে এ কথাই বলেছিল মাহতাব। বাবাকে সাহস দিচ্ছিল। মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। প্রিয়জনেরা যেন ভেঙে না পড়ে—নিজের কষ্টের চেয়ে সেই চিন্তাই বড় ছিল তার কাছে। বাবা-মাকে ভরসা দেওয়া ছেলেটিই সবাইকে হতাশ করল!

চার দিন পোড়া শরীরের যন্ত্রণা সহ্য করে চিরবিদায় নিল কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মাহতাব রহমান ভূঁইয়ার। রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে দগ্ধ হয়েছিল সপ্তম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মাহতাব।

মৃত্যুর খবর আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো পরিবার। সন্ধ্যায় মরদেহ বাড়ি পৌঁছালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় কুমিল্লার দেবিদ্বারের রাজামেহার ইউনিয়নের চুলাশ ভূঁইয়া বাড়িতে। আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

মাহতাবের বাবা মিনহাজ উদ্দিন ভূঁইয়া চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘বার্ন ইউনিটে ছেলের কাছে যেতেই বলে, বাবা, আমি ঠিক হয়ে যাব। সে জানত সে কী অবস্থায় আছে, তবু আমাদের ভেঙে পড়তে দেয়নি। আমাদের সাহস দিত। ভাবিনি, ওর এই সাহসী কথাই হবে শেষ কথা!’

মিনহাজ বলেন, ‘আমার ছেলে ক্লাসে ফার্স্ট বয় ছিল। ওর বিরুদ্ধে কারও মুখে একটা বাজে কথা নেই। ১৪ বছরে ও কখনো কাউকে কষ্ট দেয়নি। আজ আমার কলিজার টুকরাটা সবাইকে ছেড়ে চলে গেল।’

একমাত্র সন্তান হারিয়ে কোনোভাবেই শোক সামলাতে পারছেন না বাবা-মা। মাহতাব ছিল মিনহাজ উদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে মিনহাজুর রহমানের একমাত্র ছেলে। মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের এই ছেলেটি পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিল। তার প্রিয় স্কুলজীবন, নতুন ব্যাগ, বই-পুস্তক—সবই এখন স্মৃতি।

মাহতাবের মামা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল নিষ্পাপ এক কিশোরের। পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সবাই যেন হতবাক—এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন।’

বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পর চুলাশ উখারী বাজার শাহী ঈদগাহ মাঠে মাহতাবের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন সহপাঠী, শিক্ষক, প্রতিবেশীসহ শত শত মানুষ। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button