প্রেমের কথা পরিবারকে জানানোয় ইয়াবা দিয়ে বন্ধুকে ফাঁসানোর চেষ্টা


প্রেমের বিষয় পরিবারকে জানিয়ে দেওয়ায় ১০ হাজার টাকায় ইয়াবা কিনে বন্ধুকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই যুবকের বিরুদ্ধে। তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন ফুলবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ অনন্তপুর গ্রামের জুয়েল হক ও নাগেশ্বরী উপজেলার এগারোমাথা সাতকুড়ারপাড়ের মনির হোসেন। ভুক্তভোগী মিলন মিয়া ফুলবাড়ীর আজোয়াটারি গ্রামের মোজাফফর হোসেনের ছেলে।
নাগেশ্বরী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অপূর্ব কুমার জানান, গত শনিবার রাতে মনির ফোন করে জানান, এগারোমাথা বাজারে এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলের আসনের নিচে ইয়াবা রয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেলটি আটক করে আসন ও যন্ত্রাংশ খুলে ৬৭টি ইয়াবা জব্দ করে।
এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের মালিক মিলনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশের সন্দেহ হয়। মিলনের দাবি, ইয়াবার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। পরে তথ্য দেওয়া মনিরকে বাজার থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তিনি জানায়, এ ঘটনায় জুয়েল জড়িত। জুয়েলের কথায় তিনি পুলিশকে তথ্য দিয়েছেন। এরপর রোববার ভোরে বাড়ি থেকে জুয়েলকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
জুয়েলের স্বীকারোক্তির বরাতে পুলিশ জানায়, প্রেমসহ ব্যক্তিগত অন্যান্য কিছু বিষয় জুয়েলের পরিবারকে জানান তাঁর বন্ধু মিলন। এ নিয়ে কয়েক মাস আগে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। জুয়েল প্রতিশোধ নিতে তাঁর আরেক বন্ধু মনিরকে নিয়ে মিলনকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন। মাদক দিয়ে ফাঁসাতে ১০ হাজার টাকায় ইয়াবা কেনেন। ঘটনার দুই দিন আগে কৌশলে মিলনের মোটরসাইকেল নিজের বাড়িতে নেন জুয়েল। পরে আসনের নিচে ইয়াবা রেখে বাইকটি ফেরত দেন। শেষে মনিরকে দিয়ে পুলিশকে ইয়াবার বিষয়টি জানানো হয়।
ভুক্তভোগী মিলন বলেন, ‘আমি ঢাকায় থাকি। ঈদে বাড়িতে আসি। গত শুক্রবার জুয়েলের খালাতো ভাই তাঁর বাবাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে আমার মোটরসাইকেল নেয়। পরে তার কাছ থেকে জুয়েল মোটরসাইকেল নিয়ে ইয়াবা রেখে আমাকে ফাঁসানোর ছক আঁকে। কিন্তু পুলিশের নিরপেক্ষ ও নিবিড় তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। তার পরিবারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। আমরা একসময় বন্ধুর মতো মেলামেশা করেছি। তার ও তার পরিবারের ভালোর কথা চিন্তা করে কিছু বিষয়ে পরিবারকে জানালে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তখন থেকে আমাদের তেমন মেলামেশাও নেই। কিন্তু প্রতিশোধের নেশা থেকে সে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।’
এ ঘটনায় নাগেশ্বরী থানার এসআই অলকান্ত রায় বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জুয়েল ও মনিরকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রভাত চন্দ্র রায় জানান, আসামিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ‘সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে মোটরসাইকেলসহ ইয়াবা উদ্ধারের পর ঘটনাটি নিয়ে আমাদের সন্দেহ জাগে। বিষয়টি নিয়ে আমরা নিবিড়ভাবে তদন্ত করি। সোর্স হিসেবে পুলিশকে ফোন দেওয়া মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসে। মূলত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বিরোধের জেরে বন্ধুকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেলে ইয়াবা রাখা হয়।’