প্রচণ্ড গরমে বাড়ছে রোগী, শয্যাসংকট ও ভোগান্তি


গত কয়েক দিনের একটানা তাপপ্রবাহের কারণে বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়া ও গরমজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েকগুন বেড়েছে। রোগীর চাপ বেশি থাকায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যাসংকট। ফলে সিট না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দাতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে রোগীদের।
মান্দা: নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া ও গরমজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত পাঁচ দিনে অন্তত ২৩৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৮৫ জন। আর প্রচণ্ড গরমের কারণে পানিশূন্যতা, পেটব্যথা, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে চিকিৎসা নিয়েছে আরও ১৫০ জন। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে আজ বৃহস্পতিবার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৭ জন। ফলে বেডের অভাবে অনেক রোগীকে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এসব স্থানে বিদ্যুতের সুবিধা না থাকায় গরমে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
গত বুধবার সন্ধ্যায় পিরপালি বাজার থেকে পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন কুরসিয়া বিবি (৬০)। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে বারান্দায় রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ নেই, ফ্যানও নেই। গরমে আর পেটব্যথায় একেবারে নাকাল অবস্থা। একটু ভালো জায়গা আর চিকিৎসার ঠিকঠাক ব্যবস্থা চাই।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজনের দাবি, দ্রুত হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বাড়ানো, বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তাসনিম হুসাইন আরিফ বলেন, ‘কোরবানির দিন থেকে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে হঠাৎ করেই রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। জনবল সংকটে আমরা চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্র চারজন চিকিৎসক নিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও আবাসিক চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নিতে হচ্ছে। হঠাৎ রোগীর চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বেড সংকুলান সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেক রোগীকে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। রোগীর চাপ এ রকম থাকলে আমাদের আরও সমস্যায় পড়তে হতে পারে।’
দুর্গাপুর: রাজশাহীর দুর্গাপুরে ঈদের পর হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি রোগী ডায়রিয়া ও পেটের পীড়াজনিত সমস্যার। এদিকে রোগীর চাপ থাকলেও উপজেলার ৫০ শয্যা হাসপাতালের বহির্বিভাগে মাত্র দুজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। ঈদের পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ার রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি ও বহির্বিভাগে ১৫-২০ জন ডায়রিয়ায় ও পেটের পীড়াজনিত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত চার দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে ৭০ জন ডায়রিয়া ও পেটের পীড়াজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও মধ্যে বয়সী লোক বেশি রয়েছে।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর চাপ থাকলেও চিকিৎসক কম। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে বহির্বিভাগে মাত্র দুজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। চক্ষু, মেডিসিন, শিশু, হাড়জোড় এমনকি টিএইচওর কক্ষ বন্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শিশুসহ ১০ জন ডায়রিয়া ও পেটের পীড়াজনিত রোগে ভর্তি হয়েছে। এর আগে ঈদের পর থেকে প্রায় ৭০ জন শিশু, নারী-পুরুষ ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে।
এদিকে হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। তাঁরা জানান, ঈদের পর ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে।
জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঈদের পর প্রচণ্ড গরম ও খাদ্য অভ্যাসের কারণে ডায়রিয়া ও পেটের পীড়াজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। অনেকে ভর্তি হয়ে সুস্থ বাড়ি ফিরছে এবং কিছু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
রুহুল আমিন বলেন, একটু সচেতন হলেই ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এ জন্য এ সময় বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
ফুলবাড়ী: দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অনেকে আখের রস, লেবুর পানি ও শরবত খেয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করছেন। দুপুর ১২টার পর থেকে বিকেল পর্যন্ত ফাঁকা থাকছে ফুলবাড়ী পৌর শহরের রাস্তাঘাট। দাবদাহ আর গরমে চাহিদা বেড়েছে দই, ঘোল, শরবত ও তালের শাঁসের।
উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের কৃষিশ্রমিক ইলিয়াস হেম্ব্রম ও বেতদীঘি ইউনিয়নের সূর্যপাড়া গ্রামের কৃষিশ্রমিক শ্যামল হাঁসদা বলেন, ‘দাবদাহের কারণে মাঠে কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছি। তীব্র দাবদাহে জন্য খেতখামারে বেশিক্ষণ টিকে থাকা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নারী কৃষিশ্রমিক রাস্তার কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দাবদাহের জন্য।’
পৌর এলাকার রিকশাচালক হাসান আলী বলেন, কয়েক দিন ধরে ভ্যাপসা গরমে রাস্তায় লোকজন পাওয়া যাচ্ছে না। সকালে রিকশা নিয়ে বের হলেও যাত্রীর অভাবে তেমন আয়-রোজগার হয়নি। রাস্তা থাকছে ফাঁকা। আয় না হওয়ায় অনেকে বিকেলে রিকশা বের করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, বর্তমানে মাঝারি তাপপ্রবাহের জন্য মানুষ সর্দি-জ্বর, গলাব্যথা, ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানাসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এ সময় রোদ ও গরম এড়িয়ে চলতে হবে, বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।