শিরোনাম
বিলম্বিত ট্রেনে যেভাবে রাউলিংয়ে মাথায় আসে হ্যারি পটারের প্লট‘মাঠকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ভারতের কোচের কোনো দোষ নেই’বাংলাদেশি পণ্যে ভারতের চেয়ে কম শুল্কের ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রবিবিসির প্রতিবেদন /ট্রাম্পের শুল্কে বড় ধাক্কা খাবে ভারতের পোশাকসহ রপ্তানি খাতসৈয়দপুরে আকাশমণি গাছে ঝুলছিল তরুণের মরদেহঢাকা মেডিকেলে সহযোগীসহ ভুয়া চিকিৎসক আটকজুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগে শহীদ পরিবার ও আহতদের অবস্থান কর্মসূচিশ্বশুরবাড়ি থেকে আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তারতারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে চলছে দ্বিতীয় দিনের আপিল শুনানিথানায় তাসকিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার, বন্ধু ‘ট্রমাটাইজড’, আসল ঘটনা কী

প্রেমতলীতে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হুমকির অভিযোগ

প্রেমতলীতে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হুমকির অভিযোগ

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে কর্মরত ইনচার্জ এস এম মাকসুদুর রহমান ও উপপরিদর্শক (এসআই) বরন সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, পক্ষপাতিত্ব ও অর্থ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না এ দুই কর্মকর্তা। পুলিশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে হুমকি দেওয়ার রেকর্ডসহ একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে রাজশাহীর পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পরিদর্শক মাকসুদুর রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এসআই বরন সরকার। মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, আওয়ামী দোসর বানিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মতো অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ইনচার্জ মাকসুদুর প্রায় সব অভিযোগই তদন্তের দায়িত্ব দেন এসআই বরন সরকারকে। আর অভিযোগ পেলেই অনৈতিক সুবিধা নিয়ে একটি পক্ষের হয়ে অবস্থান নেন বরন সরকার। বরনের মোবাইল ফোন থেকে কথা বলার সময় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একজন সদস্য এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন—এমন ফোনকল রেকর্ডও পাওয়া গেছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মামলা কিংবা গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে এ দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রচুর টাকা কামিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, ‘বরন সরকার মানুষের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন। প্রেমতলী-বসন্তপুর রাস্তায় চলাচল করা সাধারণ মানুষকেও রাতের বেলা তল্লাশির নামে হয়রানি করেন। বিভিন্নভাবেই শুনেছি যে তাঁরা মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। ওসিকে জানিয়েছি। ওসিও বলেছেন যে, তাঁদের খারাপ আচরণের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ওপরে জানাবেন। কিন্তু কী জানিয়েছেন, জানি না। এখনো তাঁদের এ রকম কার্যক্রম চলছে।’

উপজেলার বড়গাছি গ্রামের আজিজুল হাসান নামের এক ব্যক্তি জানান, সম্প্রতি মাটিকাটা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য উকিল আলীর ভাই নবাব আলী তাঁকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মারধর করেন। এ ব্যাপারে তিনি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে অভিযোগ দিলে ইনচার্জ মাকসুদুর রহমান তা তদন্তের দায়িত্ব দেন এসআই বরন সরকারকে। গত সোমবার দুপুরে বরন সরকারের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর কাছে একটি কল আসে। তখন এসআইয়ের ফোন থেকে কথা বলেন ইউপি সদস্য উকিল। অভিযোগ দেওয়ায় উকিল তাঁর ওপর চড়াও হন এবং তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন।

আজিবুল বলেন, ‘হুমকি দেওয়ার রেকর্ড আমার কাছে আছে। পুলিশের মোবাইল ফোন থেকে ফোন করে প্রতিপক্ষ এভাবে হুমকি দেবে, এটা তো হতে পারে না। তার মানে পুলিশ একটি পক্ষের হয়ে অবস্থান নিয়েছে। আমি তো এখন ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতে পারি না।’

দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বিদিরপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসা মোড়ের বাসিন্দা তৈয়বুর রহমানও। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একটা জমিজমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আমাদের ডেকেছিল। যাওয়ার পরে অপেক্ষা করতেই থাকি, কিন্তু ইনচার্জ আসছিলেন না। ফোন করলাম। তিনি ভালোভাবেই কথা বলে এলেন। আসার সঙ্গে সঙ্গে বরন সরকার তাঁর কানে কী যেন বললেন। তারপর দুজনে মিলে আমাদের সঙ্গে এত বাজে ও নোংরা ব্যবহার করলেন, তা বলার মতো না। মনে হচ্ছিল, সম্পত্তি তাঁদের পৈতৃক, কাগজপত্রের কোনো দাম নেই।’

সম্প্রতি উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের গোলাম হাসান নামের এক ব্যক্তি পরিদর্শক মাকসুদুর রহমান ও এসআই বরন সরকারের বিরুদ্ধে জেলার পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তিনি ১৮ জুলাই নিজের জমিতে গাছ লাগাচ্ছিলেন। এ নিয়ে আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তাঁর নামে তদন্তকেন্দ্রে অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ উভয় পক্ষকে বিকেলে তদন্তকেন্দ্রে ডাকে। পুলিশের ডাকে তিনি সময়মতো তদন্তকেন্দ্রে হাজির হন, কিন্তু অভিযোগকারীই যাননি।

অভিযোগে তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর আমি বিষয়টি তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ এস এম মাকসুদুর রহমান ও এসআই বরন সরকারকে জানাই। এ সময় বরন সরকার আরিফুলের পক্ষ নিয়ে আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে বলেন, “জমিতে আর যাবি না, গেলে তোকে লকাপে ভরে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেব।” বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। কারণ, সে পুলিশকে ম্যানেজ করে ফেলেছে।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘ইনচার্জ এস এম মাকসুদুর রহমান ও এসআই বরন সরকার মাদকদ্রব্যের গডফাদারের সঙ্গে ওঠাবসা করেন এবং কেউ তাঁদের কথা না শুনলে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেন। তাঁরা যেদিকে টাকা পান, সেদিকেই ঢলে পড়েন। ফলে জনসাধারণ বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক ন্যায়বিচার পাচ্ছে না।’ তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

সর্বশেষ আজ বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে কৃষ্ণবাঢি গ্রামে নারীদের ঝগড়া নিয়ে অভিযোগ পেয়ে সেখানে যান এসআই বরন সরকার। সেখানে একটি পক্ষের হয়ে অন্য পক্ষকে শাসাচ্ছিলেন। এ সময় গ্রামের মানুষের তোপের মুখে পড়েন এসআই বরন সরকার। পরে সেখান থেকে পালিয়ে যান এসআই বরন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই বরন সরকার বলেন, ‘আমি কাউকে গালাগালি করি না। আমার ফোন থেকে কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও সঠিক নয়।’ মাদক কারবারিদের কাছ থেকে টাকা তোলা বা আওয়ামী লীগের দোসর বানিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

আর তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক এস এম মাকসুদুর রহমান বলেন, যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেগুলো ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। কাউকে ভয়ভীতি দেখানোর সুযোগ নেই।

রাজশাহীর এসপি ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগটা এখনো দেখা হয়নি। আর যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, এগুলো হলে তো খারাপ। পুলিশের ফোন থেকে কেউ হুমকি দেবেন, এটা তো হয় না। অভিযোগগুলো এলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button