শিরোনাম

আয়ারল্যান্ডে দোষী সাব্যস্ত ‘প্রতারণার রানি’ মারিয়েন

আয়ারল্যান্ডে দোষী সাব্যস্ত ‘প্রতারণার রানি’ মারিয়েন

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন মারিয়েন স্মিথ। আলোচিত এই প্রতারক ‘কুইন অব দ্য কন’ বা ‘প্রতারণার রানি’ হিসেবেও পরিচিত। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১ লাখ পাউন্ডেরও বেশি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন মারিয়েন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ কোটি ৬৩ লাখেরও বেশি টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—৫৬ বছর বয়সী মারিয়েন দীর্ঘদিন ধরেই ভুয়া পরিচয় ও প্রতারণার মাধ্যমে জীবন চালিয়ে আসছিলেন। ২০০২ সালে এক ডেটিং ওয়েবসাইটে উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক ডাকপিয়নের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হলে আমেরিকা থেকে সেখানে গিয়ে বসবাস শুরু করেন মারিয়েন। পরে তিনি সেখানে বন্ধক বা মর্টগেজ পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং সেই আস্থার জায়গা থেকেই গ্রাহক ও পরিচিতদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন।

আদালতে জানানো হয়, মারিয়েনকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ডারমট ম্যাকনিকল ৭২ হাজার পাউন্ড দিয়েছিলেন এমন একটি বাড়ি কেনার জন্য, যা ভাড়া দিয়ে তিনি তাঁর সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার খরচ চালাবেন। কিন্তু মারিয়েন কোনো বাড়ি না কিনে একটি কল্পিত বাড়ির কথা উপস্থাপন করেন এবং প্রতারণা আড়াল করতে ভুয়া ভাড়াটিয়া তৈরি করে তিনি নিজেই ভাড়া পরিশোধ করতেন।

শোনা রেইড নামের এক নারী জানান, তিনি তাঁর বাড়ি পুনঃ বন্ধক রেখে মারিয়েনকে ২৩ হাজার পাউন্ড দিয়েছিলেন একটি উচ্চ সুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখার শর্তে। কিন্তু সেই অ্যাকাউন্ট কখনো খোলাই হয়নি। একইভাবে, জেমস ও ইমেলদা স্যাভেজ দম্পতিও ২০ হাজার পাউন্ড বিনিয়োগের জন্য মারিয়েনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

২০০৮ সালের আগস্টে মারিয়েন জানান, তিনি অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তিনি আর কখনোই ফেরেননি, সেখানেই বসবাস শুরু করেন। পরে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে, তিনি নিজেই বন্ধকের টাকা শোধ করতে না পেরে উচ্ছেদের মুখে ছিলেন। এমনকি মেয়ে চেলসিকে দিয়ে তিনি আর্থিক নথিতে জাল স্বাক্ষর করাতেন।

আইরিশ আদালতে প্রসিকিউশন জানায়, মারিয়েন প্রতারণার মাধ্যমে পাওয়া অর্থ ভ্রমণ ও কেনাকাটায় উড়িয়ে দিতেন। তিনি কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনও করেননি। মাত্র ২০ মিনিট শুনানির পরই তাঁকে তিনটি চুরির অভিযোগ ও তিনটি প্রতারণার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। আগামী ১৬ অক্টোবর তাঁর সাজা ঘোষণা করা হবে।

উল্লেখ্য, উত্তর আয়ারল্যান্ড থেকে পালিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে গিয়ে নিজেকে আইআরএ থেকে পালিয়ে আসা এক আইরিশ উত্তরাধিকারিণী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। এই ছদ্মবেশে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও আরও অনেক মানুষকে প্রতারিত করেন। এমনকি এমি পুরস্কারজয়ী প্রযোজক জনাথন ওয়ালটনও তাঁর কাছে প্রতারিত হন। তবে জনাথন শেষ পর্যন্ত ‘অ্যানাটমি অব অ্যা কন আর্টিস্ট’ নামে একটি বই লিখে মারিয়েনের প্রতারণার কৌশল ও তাঁর গল্পটি ফাঁস করেন।

জনাথন ওয়ালটনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, মারিয়েন একসময় একসময় মার্কিন নৌবাহিনীতে ছিলেন এবং বহু ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণা চালিয়ে গেছেন। ২৩টি ভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করে তিনি কখনো হলিউড তারকা, কখনো আইরিশ উত্তরাধিকারিণী সেজেছেন। এমনকি ব্ল্যাকমেল করে অর্থ হাতানোর ঘটনাও তাঁর জীবনের অংশ।

২০১৯ সালে জনাথনের কাছ থেকে ৬৩ হাজার ডলার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২৩ মাস পরই তিনি মুক্তি পান। এর পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাইন অঙ্গরাজ্যে নতুন ছদ্মনামে বসবাস শুরু করেন এবং আবারও প্রতারণার জাল বিস্তার করেন।

অবশেষে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মারিয়েনকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রত্যর্পণ পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি মাইন অঙ্গরাজ্যের একটি কারাগারে রয়েছেন।

উত্তর আয়ারল্যান্ডের ভুক্তভোগীরা বলছেন, ১৬ বছর পর এই রায় তাঁদের জন্য ন্যায়বিচারের প্রতীক। তবে তাঁরা আশঙ্কা করছেন, মুক্তি পেলে মারিয়েন স্মিথ হয়তো আবারও নতুন পরিচয়ে প্রতারণা শুরু করবেন।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button