নতুন প্রতিকৃতি ঘিরে শেক্সপিয়ারের গোপন প্রেম নিয়ে বিতর্ক


উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের যৌনতা ও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা প্রশ্ন রয়েছে। এবার একটি নতুন প্রতিকৃতি সেই বিতর্ককে আবারও উসকে দিয়েছে। সম্প্রতি ১৬শ শতকের এক অমূল্য ক্ষুদ্র প্রতিকৃতি আবিষ্কার করেছেন শিল্প ইতিহাসবিদ এলিজাবেথ গোল্ডরিং ও এমা রাদারফোর্ড। প্রতিকৃতিতে দেখা যায় এক তরুণ, লম্বা কোঁকড়ানো চুল, নীল চোখ, সাদা ত্বক এবং কানে ঝোলানো মুক্তার দুল। চেহারার ভঙ্গিমা এমন যে প্রথম দর্শনেই বোঝা কঠিন তিনি নারী না পুরুষ।
গবেষকদের ধারণা, এটি তৃতীয় আর্ল অব সাউদাম্পটন হেনরি রাইথসলির ছবি। শেক্সপিয়ারের প্রথম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি, ছিলেন কবির শুরুর দিকের কবিতার অনুপ্রেরণাও। প্রতিকৃতির অন্তরঙ্গ ভঙ্গি, পোশাক ও চোখের দৃষ্টি ইঙ্গিত দেয় এটি কোনো বিশেষ ঘনিষ্ঠজনের জন্য আঁকা হয়েছিল। গোল্ডরিং বলেন, ‘এটি নিশ্চয়ই খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিংবা প্রেমিকের জন্য আঁকা।’
সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কারটি ঘটে যখন প্রতিকৃতিটি ফ্রেম থেকে বের করা হয়। জানা যায়, এটি আসলে একটি তাসের কার্ডের ওপর আঁকা হয়েছিল—‘হরতন’-এর কার্ডে। কিন্তু পরবর্তীতে সেই হরতন তথা ‘হার্টজ চিহ্ন’ মুছে দিয়ে এর জায়গায় অঙ্কিত হয় ‘ইশকাবন’ বা সম্ভবত একটি বর্শা—যা শেক্সপিয়ারের পরিবারের প্রতীকচিহ্নের সঙ্গে মিলে যায়।
রাদারফোর্ডের মতে, এটি ছিল প্রবল আবেগের বহিঃপ্রকাশ, যেন হৃদয় ভাঙার এক প্রতীকী কাজ।
প্রতিকৃতিটি ১৫৯০-এর দশকে নিকোলাস হিলিয়ার্ডের আঁকা। সেই সময়েই শেক্সপিয়ার তাঁর প্রথম দুটি মহাকাব্যিক কবিতা ‘ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস’ ও ‘দ্য রেপ অব লুক্রি’ সাউদাম্পটনের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছিলেন। বিশেষ করে, দ্বিতীয় উৎসর্গপত্রে তিনি লিখেছিলেন, ‘তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা অনন্ত।’ এসবই ইঙ্গিত মেলে দুজনের সম্পর্ক ছিল নিছক সাহিত্যিক নয়, আরও অন্তরঙ্গ।
শেক্সপিয়ারের সনেটগুলোতেও এক তরুণ পুরুষকে নিয়ে গভীর আবেগময় ভাষা পাওয়া যায়। বিশেষ করে, সনেট ২০-এ তিনি উল্লেখ করেন—‘নারীর মুখাবয়ব, কিন্তু পুরুষ।’ ফলে বহু গবেষক বিশ্বাস করেন, শেক্সপিয়ার সম্ভবত দ্বৈত যৌন প্রবণতার অধিকারী ছিলেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, প্রতিকৃতিটি এত দিন সাউদাম্পটনের বংশধরদের কাছে ছিল। পরে এটি বিক্রি হয় এক অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে। দীর্ঘদিন একটি সাধারণ বাক্সে পড়ে থাকা এই শিল্পকর্ম এখন আবার আলোচনার কেন্দ্রে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু শেক্সপিয়ার ও সাউদাম্পটনের সম্পর্ক নয়, বরং এলিজাবেথ যুগের লিঙ্গ ও যৌনতার প্রতি সমাজের জটিল দৃষ্টিভঙ্গিও উন্মোচন করে।
ঘটনার বহু বছর পর এখন প্রশ্ন উঠেছে—তাহলে কি প্রতিকৃতিটি ছিল প্রেমের নিদর্শন? শেক্সপিয়ারের কাছে দেওয়া হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ফেরত এসেছে ভাঙা হৃদয়ের প্রতীক হয়ে? সুনিশ্চিত উত্তর নেই। তবে শেক্সপিয়ার বিশেষজ্ঞ স্যার জোনাথন বেট বলেন, ‘আমি নিশ্চিত দুজনের ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। সম্পর্ক শারীরিক পর্যায়ে গিয়েছিল কি না, তা অজানা থেকে যাবে।’
ক্রাইম জোন ২৪