শিরোনাম

অঙ্গীকারে সংশোধন অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া

অঙ্গীকারে সংশোধন অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া

রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির কারণে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার তিনটা ধারায় ভাষাগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া। এসব পরিবর্তন আনার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত জুলাই সনদ তৈরি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হতে পারে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।

জুলাই সনদের সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়ার আট দফা অঙ্গীকারনামার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছে কমিশন সূত্র।

দ্বিতীয় দফায় উল্লেখ ছিল, বিদ্যমান সংবিধান ও আইনে যা কিছুই বলা থাকুক, প্রাধান্য পাবে জুলাই সনদ। জামায়াত ও এনসিপি এতে রাজি থাকলেও বিএনপি জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দিতে রাজি নয়। বিএনপিসহ কয়েকটি দল আপত্তি করায় সংবিধানের ওপর প্রাধান্যের অঙ্গীকারে ভাষাগত পরিবর্তন আনা হবে। এ ক্ষেত্রে, সংস্কারের যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে, সেই ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধানাবলির চেয়ে সনদ প্রাধান্য পাবে রাখা হবে। যেমন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, নির্বাচন কমিশন নিয়োগের বিধানাবলি সংবিধানে রাখার পক্ষে মত দিয়েছে দলগুলো। জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় তা-ই থাকবে, বিদ্যমান বিধানের চেয়ে সনদের সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।

সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় তৃতীয় দফার অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, সনদের ব্যাখ্যা দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের থাকবে। বিএনপিসহ অন্তত আটটি দল এ অঙ্গীকারে রাজি নয়। তাদের ভাষ্য, সনদ রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল। আদালতের হাতে তা ন্যস্ত করা ঠিক হবে না।

এই আপত্তির মুখে গতকালের কমিশন সভায় আলোচনা হয়, সনদ বাস্তবায়নে সংবিধানে যেসব পরিবর্তন আনা হবে, তা ব্যাখ্যার ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবেই আপিল বিভাগের হাতে থাকবে। তাই এই অঙ্গীকার আলাদা করে রাখার প্রয়োজন নেই।

সনদের খসড়ায় চতুর্থ দফার অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, সনদের সুপারিশ ও প্রস্তাব সাংবিধানিকভাবে বলবৎ বলে গণ্য হবে। সনদের বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা এবং জারির কর্তৃত্ব নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। জামায়াত, এনসিপি এতে একমত হলেও, বিএনপি রাজি নয়। দলটি প্রথম দফায় দেওয়া মতামতে বলেছে, আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ বন্ধ হলে নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। সূত্র জানিয়েছে, এ অঙ্গীকারে পরিবর্তন করে বলা হতে পারে, স্বাক্ষরকারী কোনো দল সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তুলবে না।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির কারণে তিনটি প্রতিশ্রুতিতে সংশোধন আনা হয়েছে।

কোন প্রতিশ্রুতির স্থলে কী আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এমন প্রস্তাব রাখা হচ্ছে, যা হবে আইনি দিক থেকে গ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিকভাবে টেকসই।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, চূড়ান্ত সনদটি দুই খণ্ডে সাজানো হবে। প্রথম খণ্ডে থাকবে সেই সব বিষয়ে ঐকমত্য, যা সরকার প্রশাসনিক আদেশ বা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে অবিলম্বে কার্যকর করতে পারবে। দ্বিতীয় খণ্ডে থাকবে দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো। এসব ভাগ আগের খসড়ায় ছিল না।

বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সনদে যুক্ত করা হবে না জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনে সহসভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এবং আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়ার পর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াসংক্রান্ত সুপারিশ সরকারকে জমা দেওয়া হবে। কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বরের পর বাড়ানো হবে না বলেও জানান তিনি।

সূত্রে জানা গেছে, সনদ চূড়ান্তকরণ নিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বুধবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব জানানো হয়। এতে সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ, গণভোট, সাংবিধানিক সংস্কার অধিবেশন, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বা ডিক্রি জারির প্রস্তাবসহ আরও অনেক বিষয় ছিল।

গতকাল জুলাই সনদ প্রণয়ন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সুপারিশ পর্যালোচনার জন্য বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কেন বিলম্ব হচ্ছে জানতে চাইলে কমিশনের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সব রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি, তবে কিছু দল আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে মতামত দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আজ বেলা ৩টা থেকে আবার বৈঠকে বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে সনদ চূড়ান্ত করার পর তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এরপর একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর নেওয়া হবে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button