হোয়াইট হাউসের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সিভিত্তিক এক ক্ষুদ্র দেশ


যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়াচ্ছে এক স্বঘোষিত ক্ষুদ্র দেশ—ফ্রি রিপাবলিক অব লিবারল্যান্ড। ২০১৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ও করব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে চেক রাজনীতিক ভিট জেদলিচকা গড়ে তোলেন এ মাইক্রোনেশন।
তিনি তখন সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তে দানিউব নদীর পাশের এক ‘টেরা নালিয়াস’—অর্থাৎ কারও মালিকানাভুক্ত নয়, এমন জমিতে লিবারল্যান্ডের পতাকা উত্তোলন করেন। সে জমি এখনো কোনো রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়নি, বরং ক্রোয়েশিয়া একে বিতর্কিত এলাকা হিসেবে দেখছে এবং সেখানে লিবারল্যান্ডের স্থায়ী বসতি স্থাপনে বাধা দিয়ে আসছে।
তবে এখন লিবারল্যান্ডের শীর্ষ নেতৃত্ব বলছে, পরিবর্তন আসছে। কারণ, দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন চীনা ক্রিপ্টোকারেন্সি বিলিয়নিয়ার জাস্টিন সান। তার হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রে লিবারল্যান্ডের কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে।
লিবারল্যান্ডের তহবিলের বড় অংশই এসেছে বিত্তশালী ক্রিপ্টো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে। দেশটি ইতিমধ্যে দুটি নিজস্ব ক্রিপ্টো মুদ্রা ছেড়েছে—একটি লেনদেনের জন্য, অন্যটি নির্বাচনে ভোটে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে নিজস্ব ব্লকচেইন-ব্যবস্থা।
২০২৩ সালের অক্টোবরে সান প্রথমবার লিবারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর তিনি আরও তিনবার নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পরে এক্সে পোস্টে সান লেখেন, ‘যেভাবে ভ্যাটিকান ক্যাথলিকদের আত্মিক কেন্দ্র, লিবারল্যান্ড হবে স্বাধীনতাকামীদের আদর্শিক মাতৃভূমি।’
২০২৪ সালের নভেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সানের সঙ্গে ট্রাম্প পরিবারের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তিনি ট্রাম্প পরিবারের সহপ্রতিষ্ঠিত ক্রিপ্টো কোম্পানি ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়ালের উপদেষ্টা পদে যোগ দিয়েছেন এবং প্রায় ৭৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন।
ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সানের বিরুদ্ধে বাজার কারসাজির মামলায় বিরতি চেয়ে আবেদন করে। এরপর গত মে মাসে সান ট্রাম্প ন্যাশনাল গলফ ক্লাবে একগালা ডিনারে অংশ নেন, যেখানে ট্রাম্প নিজেও উপস্থিত ছিলেন। জুনে এরিক ট্রাম্প এক্সে সানকে ‘দারুণ বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন।
সান বলেন, ‘এ প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের বহু মিত্র রয়েছে। সময়টা লিবারল্যান্ডের জন্য খুবই মূল্যবান।’
লিবারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জেদলিচকা ইঙ্গিত দেন, হোয়াইট হাউসে সানের প্রভাব কাজ করছে। তিনি বলেন, সান অনেক দিন হোয়াইট হাউসে কাটিয়েছে। বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না, সবকিছুই খুব স্পর্শকাতর। তবে তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন।
২০২৩ সালের শীতে দানিউব নদীর পানি বাড়ায় পুরো লিবারল্যান্ড প্লাবিত হয়। দুই বছরে ২৫ বারের বেশি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করেছে ক্রোয়েশিয়া। তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে বলে দাবি করেন জেদলিচকা।
জেদলিচকা বলেন, ‘মানুষ কখনোই লিবারল্যান্ড ছাড়েনি, বরং তাঁবুতে কিংবা হাউসবোটে (বসবাসযোগ্য নৌকা) থেকেছে। গত চার মাসে ক্রোয়েশিয়া কিছুটা সহনশীল হয়েছে। আমরা বিচ বার আর ট্রিহাউস বানিয়েছি।’
মহাকাশ মিশন
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত লিবারল্যান্ডের ভিডিও কনফারেন্সে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন একটি চমকপ্রদ পরিকল্পনার কথা উঠে আসে। সেটি হলো লিবারল্যান্ডের ‘মহাকাশ মিশন’।
জাস্টিন সান আগস্টের শুরুতে ব্লু অরিজিন স্পেসক্রাফটে মহাকাশে উড়ে যান। প্রেসিডেন্ট জেদলিচকা বলেন, ‘তিনি বিশ্বের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন।’ এখন তাঁরা ২০২৬ সালে এক গ্রহাণুতে লিবারল্যান্ডের পতাকা পাঠাতে চাচ্ছেন। এই উদ্যোগে ‘লাইফশিপ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
চলতি মাসের শুরুতে সাবেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান রন পলের ৯০তম জন্মদিনে ‘অফিশিয়াল পার্টনার’ হিসেবে অংশ নেয় লিবারল্যান্ড। সেখানে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওয়াশিংটন দূত।
দুই দিন পর লিবারল্যান্ড প্রতিনিধিদল রন পলকে ‘ফার্স্ট ক্লাস অর্ডার অব মেরিট’ সম্মাননা দেয়।
লিবারল্যান্ড প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে। আমরা একে ‘‘বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ’’ বলতে পারি।’
ক্রাইম জোন ২৪