স্বামীর পরকীয় ঠেকাতে নিজের সৌন্দর্যবর্ধনে নাতির স্কুল ফির ১০ লাখ টাকা খরচ দাদির


চীনে ৫৮ বছর বয়সী এক নারী স্বামীকে পরকীয়া থেকে বিরত রাখতে নিজের সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে নাতির স্কুল ফির ৬২ হাজার ইউয়ান খরচ করে ফেলেছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকার বেশি। তবে তারপরও খুব একটা লাভ হয়নি।
হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, স্বামীকে পরকীয়া থেকে বিরত রাখতে নিজের ত্বকের বলিরেখা দূর করতে চিকিৎসায় খরচ করেছেন ৬২ হাজার ইউয়ান বা ৮ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার।
মধ্য চীনের হেনান প্রদেশের ওই নারীর নাম চুই। গত ১১ আগস্ট নিজ আবাসিক এলাকার একটি থেরাপি সেন্টারে যান। সেন্টারের মালিক ও আরেকজন গ্রাহক চুইকে পাশের একটি প্লাস্টিক সার্জারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হয় সৌন্দর্যবর্ধক চিকিৎসা নেওয়ার।
ক্লিনিকের সার্জন চুইকে বলেন, তাঁর মুখের ত্বকে অনেক বেশি ভাঁজ রয়েছে, যা তাঁর জীবনে অশুভ প্রভাব ফেলছে। চুইকে জানানো হয়, চোখের কোণের ভাঁজ (ক্রোজ ফিট) মানে তাঁর স্বামী প্রতারণা করছেন। এসব ভাঁজ মুছে ফেললে স্বামীর ‘পিচ ব্লসম লাক’ বন্ধ হবে। চীনা সংস্কৃতিতে ‘পিচ ব্লসম লাক’ বলতে প্রেমঘটিত ভাগ্য বা রোমান্টিক সম্পর্কের ভাগ্যকে বোঝায়।
এ ছাড়া, কপালের ভ্রু-কুঁচকানো ভাঁজ নাকি তাঁর সন্তানদের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে। চিকিৎসকেরা আরও বলেন, তাঁর নাক খুব চ্যাপ্টা, যা তাঁর সম্পদ অর্জনের ভাগ্য আটকে দিচ্ছে। চুই জানান, এসব কথাবার্তা ভেবে দেখার সময়ও পাননি। কারণ, সেন্টারের কর্মীরা আগেই তাঁর ফোন নিয়ে নেয়। সেবার ফি পেমেন্ট করার সময় তাঁকে একটি কিউআর কোড স্ক্যান করে শুধু পাসওয়ার্ড লিখতে বলা হয়। বুঝে ওঠার আগেই তিনি ক্লিনিককে ৬২ হাজার ইউয়ান দিয়ে ফেলেন।
চুই বলেন, এই টাকা ছিল তাঁর সব সঞ্চয়। এর মধ্যে ছিল নাতির টিউশন ফি-র টাকা, যা তিনি অনেক দিন ধরে জমাচ্ছিলেন। ক্লিনিকের কর্মীরা তাঁর মুখ ও গলায় হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ইনজেকশন দেন। তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি থেকে দেখা গেছে, ওই একবারের চিকিৎসায় তিনি ১০ টিরও বেশি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
চিকিৎসার পরদিন সন্ধ্যায় চুই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। তিনি মুখ খুলে কিছু খেতেও পারছিলেন না এবং মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব অনুভব করছিলেন। চুইয়ের মেয়ে জানান, ক্লিনিক তাঁর মায়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এবং টাকা ফেরতের দাবি জানান তিনি। তবে ক্লিনিকের এক বেনামি কর্মী অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, চাইলে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
চুই স্থানীয় স্বাস্থ্য পরিদর্শন ইনস্টিটিউটে ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এখন তিনি আনুষ্ঠানিক তদন্তের অপেক্ষায় আছেন।
চীন ২০১৯ সাল থেকে চিকিৎসা খাত সংস্কারের কাজ চালাচ্ছে, যাতে ভুয়া বিজ্ঞাপন ও অযৌক্তিক খরচ বন্ধ করা যায়। এরই মধ্যে দেশজুড়ে একাধিক হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়েছে এবং তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। এক অনলাইন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘সত্যি বলতে, আমি মনে করি না চিকিৎসাগুলো কোনো কাজ করেছে। তাঁর মুখে এখনো অনেক স্পষ্ট ভাঁজ দেখা যাচ্ছে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘অনেক প্লাস্টিক সার্জারি ক্লিনিক মানুষের কুসংস্কারকে কাজে লাগায়, আর তা বেশ ভালোই কাজ করে।’
ক্রাইম জোন ২৪