গরুদের জ্যাজ মিউজিক শোনাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের কৃষকেরা, কিন্তু কেন


ব্রিটেনের সবুজ-শ্যামল মাঠে এখন নতুন এক ধরনের সুরের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আগে যেখানে কেবল পাখির কূজন আর ট্র্যাক্টরের গর্জন পরিবেশের একমাত্র অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, এখন দেশটির অনেক খামারে এসব শব্দের পাশাপাশি গরুদের জন্য সুরও বাজানো হচ্ছে।
তবে এটি মোটেও শখ করে বাজানো হয় না। বরং, নতুন এই ফ্যাশনকে গরুগুলোকে আরামদায়ক রাখার চেষ্টার পাশাপাশি দুধের মান এবং উৎপাদন বাড়ানোর নতুন উপায় হিসেবেও দেখা হচ্ছে। এই প্রবণতা টিকটকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং কোটি কোটি দর্শক এর ভিডিও দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
ওয়ারউইকশায়ারের নুনিয়েটনে বসবাসকারী কৃষক চার্লস গোডবি এই ট্রেন্ডের এক প্রাণবন্ত অংশীদার। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় দশ বছর আগে একটি রোবোটিক মিল্কিং সিস্টেম চালু করেছিলাম। সেখানে অনেক নতুন এবং তীক্ষ্ণ শব্দ ছিল। আমাদের মনে হয়েছে, এগুলো গরুর জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। তাই আমরা গরুগুলোর আশপাশে ধারাবাহিক এবং শান্ত সঙ্গীতময় পরিবেশ দেওয়ার জন্য রেডিও চালু করলাম। তখন কেউ কেউ বলেছিল গরুদের ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক পছন্দ, তাই সেই সময় আমরা ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত চালু করেছিলাম। এটা গরুদের একটু শারীরিকভাবে শিথিল করতে সাহায্য করেছিল।’
চার্লস গোডবি জানান, তিনি শুধু ক্ল্যাসিক্যাল সংগীতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। জ্যাজ থেকে বিভিন্ন রেডিও স্টেশন পর্যন্ত অনেক ধরনের সংগীত গরুদের জন্য বাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জ্যাজ সংগীত এই ট্রেন্ডের মূল সুর হলেও আমার মনে হয় গরুরা যেকোনো সংগীতের প্রতি আগ্রহ দেখাতে পারে। আপনি যদি মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে যেকোনো সংগীত চালান, গরুগুলো কৌতূহলী হয়ে চলে আসবে। তারা দেখতে চায় কী হচ্ছে, আর যতক্ষণ আপনি হঠাৎ কিছু করবেন না, তারা নিশ্চয়ই আসবে।’
গরুদের জন্য মিউজিক চালানোর পেছনে বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু কারণও রয়েছে। গোডবি বলেন, বিষয়টি অনেকটা ‘পাভলভের কুকুরের পরীক্ষার মত। যেখানে কুকুরেরা ঘণ্টার শব্দ শুনেই খাবারের জন্য লালা ঝরাত। একইভাবে গরুরাও সংগীত শুনে মানসিক এবং শারীরিকভাবে দুধ দিতে প্রস্তুত হয়। সংগীত তাদের হরমোন উৎপাদন শুরু করে এবং দুধের প্রবাহ দ্রুততর করে। আমাদের মিল্কিং পার্লারে আমরা সবসময় মিউজিক চালাই, এটা শুধু কর্মীদের জন্য নয়, গরুদের জন্যও।’
তবে সব ধরনের সংগীত গরুদের পছন্দ হবে না, এমনটাই মনে করেন আরেক ওয়ারউইকশায়ার কৃষক রব হ্যাডলি। তিনি বলেন, ‘জ্যাজ গরুদের শান্ত রাখে, কিন্তু ওজ়ি অসবার্নের রক সংগীত শুনলে তারা হয়তো ভয়ে পালিয়ে যাবে।’
গোডবি বিশ্বাস করেন, গরুদের প্রতি মানুষের ভালোবাসাই এই অদ্ভুত ট্রেন্ডের জনপ্রিয়তার এক প্রধান কারণ। তিনি বলেন, ‘মানুষ গরুকে ভালোবাসে, কারণ তারা দুর্দান্ত প্রাণী। তাই গরু নিয়ে যেকোনো কিছু করলে তা স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আগ্রহ আকর্ষণ করে।’
এই মিউজিক ট্রেন্ড শুধু গরুদের জন্য নয়, পুরো দুগ্ধখামার শিল্পের জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গোডবি বলেন, ‘এই কঠিন ও কঠোর শিল্প যখন এমন নতুন এবং মজার একটা দিক নিয়ে আলোচনায় আসছে, সেটা খুবই ভালো বিষয়। এটা আমাদের খামার ও কৃষকদের জন্য নতুন একটি উৎসাহের কারণ।’
ব্রিটেনের গ্রামীণ অঞ্চলে গরুদের জন্য সংগীত বাজানোর এই প্রবণতা দিনে দিনে বাড়ছে। এটি গরুদের ভালো রাখা এবং খামার শ্রমিকদের জন্যও সুখকর পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করছে। এই নতুন সংগীত ট্রেন্ড হয়তো দুগ্ধখামারের ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনের একটি নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
ক্রাইম জোন ২৪