আত্মশুদ্ধি ও সম্মিলিত চেতনার অনন্য প্রতীক


জুমার দিনকে মুসলমানদের কাছে শুধু একটি সাপ্তাহিক ছুটি বা নামাজের দিন হিসেবে দেখা যায় না—এটি আসলে উম্মাহর সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের এক অনন্য প্রতিফলন।
ইসলামি ইতিহাসে জুমার দিনকে বলা হয় ‘সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন’। হাদিসে এসেছে, এ দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছিলেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছিলেন এবং এ দিনেই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আবার কিয়ামতও সংঘটিত হবে জুমার দিনেই। তাই এ দিনের মাহাত্ম্য কেবল ইবাদতকেন্দ্রিক নয়, বরং মানবজাতির সৃষ্টিজীবনের এক মহা স্মৃতি বহন করে।
জুমার দিনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, সম্মিলিত জুমার নামাজ। এটি মুসলমানদের জন্য শুধু একটি ফরজ ইবাদত নয়, বরং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার এক মহৎ উপলক্ষ। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে হয়তো মানুষ ব্যস্ত থাকে পার্থিব কাজে, কিন্তু শুক্রবার সবাই একত্রিত হন মসজিদে—ধনী-গরিব, নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষ—সবাই সমান হয়ে দাঁড়ান আল্লাহর দরবারে। এ সমতা ও সম্মিলনই ইসলামি সমাজব্যবস্থার মূল রূপ।
এ দিনের খুতবা মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক দিকনির্দেশনা। শুধু নামাজের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং খুতবার মাধ্যমে সমাজ, অর্থনীতি, নৈতিকতা, রাজনীতি ও মানবিক দায়িত্বের বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ শিক্ষা দেওয়া হয়। যেন প্রতিটি জুমা হয় একধরনের ‘সাপ্তাহিক বিশ্ববিদ্যালয়’, যেখানে মুসলমানেরা ইসলামি আদর্শ ও মানবকল্যাণের পাঠ নেন।
জুমার দিনকে ঘিরে কিছু বিশেষ আমলও রয়েছে—গোসল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান, সুগন্ধি ব্যবহার, সুরা কাহাফ পাঠ, দরুদ শরিফ অধিক পাঠ, দোয়ার কবুল হওয়ার বিশেষ মুহূর্তে দোয়া ইত্যাদি। এগুলো শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের চর্চা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জুমার দিন মানুষকে মনে করিয়ে দেয় জীবনের লক্ষ্য ও আখিরাতের কথা। সাপ্তাহিক এ দিন হয়ে ওঠে আমাদের জীবনের হিসাব নেওয়ার, নিজের ভুলত্রুটি সংশোধন করার এবং নতুনভাবে আল্লাহর পথে ফিরে আসার এক আলোকবর্তিকা।
তাই বলা যায়, জুমার দিন শুধু ইবাদতের দিন নয়; এটি এক আধ্যাত্মিক নবজাগরণের দিন, সামাজিক ঐক্যের দিন, নৈতিক চেতনার দিন এবং আল্লাহর সঙ্গে নবায়িত অঙ্গীকারের দিন।
লেখক: কলাম লেখক ও গবেষক
ক্রাইম জোন ২৪