মোবাইলে সর্বত্র ইন্টারনেট সংযোগ দেবে স্টারলিংকের ডাইরেক্ট-টু-সেল


নতুন যুগের ইন্টারনেট সেবা নিয়ে হাজির ইলন মাস্কের স্টারলিংক। তাদের সেবার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক না থাকার ভোগান্তি দূর হয়েছে।
কোম্পানিটির ডাইরেক্ট-টু-সেল (ডি২সি) প্রযুক্তির মাধ্যমে চলন্ত অবস্থায় কিংবা একেবারে দুর্গম এলাকায় মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে। এ জন্য কোনো রাউটার বা ওয়াইফাইয়ের প্রয়োজন নেই।
মোবাইলে স্যাটেলাইট সংযোগ
স্পেসএক্সের উদ্যোগে চালু হওয়া এই প্রযুক্তিতে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা লো আর্থ অরবিট (এলইও) স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি মোবাইলে সংকেত পাঠানো হয়। এর ফলে টাওয়ারের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায়।
এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, চিলি ও পেরুতে এই প্রযুক্তি চালু হয়েছে। এসব দেশে টি-মোবাইল (যুক্তরাষ্ট্র), রজার্স (কানাডা), অপটাস ও টেলস্ট্রা (অস্ট্রেলিয়া), কেডিডিআই (জাপান), ওয়ান এনজেড (নিউজিল্যান্ড), সল্ট (সুইজারল্যান্ড) এবং এনটেল (চিলি ও পেরু) অপারেটর হিসেবে কাজ করছে।
টি-মোবাইল তাদের প্রিমিয়াম ‘গো৫জি নেক্সট’ প্ল্যানে এই সেবা বিনা মূল্যে দিচ্ছে। অন্য প্ল্যানের গ্রাহকদের জন্য মাসিক ১০ ডলার খরচ হচ্ছে।
৬০টির বেশি ফোনে চলবে সেবা
স্পেসএক্স জানিয়েছে, বর্তমানে আইফোন ১৩ ও তার পরের মডেল, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২১ ও তার পরের মডেল, গুগল পিক্সেল ৯সহ ৬০টির বেশি মডেলে এই সেবা ব্যবহার করা যাচ্ছে।
ডাইরেক্ট-টু-সেল সেবা চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ৬৫০টির বেশি বিশেষায়িত স্যাটেলাইট, যা স্টারলিংকের ৭ হাজার ৬০০টির বেশি উপগ্রহের বৃহৎ নেটওয়ার্কের অংশ।
এই উপগ্রহগুলোয় রয়েছে ইনোডবি (eNodeB) মডেম ও ‘ফেজড-অ্যারে অ্যান্টেনা’ প্রযুক্তি, যা সাধারণ ৪জি এলটিই ফোনের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে পারে।
এই স্যাটেলাইটগুলো ফ্যালকন ৯ (এবং ভবিষ্যতে স্টারশিপ) রকেটে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এতে রয়েছে লেজার ব্যাকহল প্রযুক্তি, যা বৈশ্বিক সংযোগ নিশ্চিত করে এবং স্যাটেলাইটের গতির ফলে সৃষ্ট ‘ডপলার শিফট’-এর মতো জটিলতা মোকাবিলা করে।
কাজ করে যেভাবে
৩৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় (প্রায় ২১৭ মাইল) পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে স্টারলিংকের সৌরশক্তিচালিত উপগ্রহ। এগুলোকে বলা যায় মহাকাশে থাকা মোবাইল টাওয়ার। ফলে ভূমিকম্প, ঝড় কিংবা অন্য কোনো দুর্যোগে স্থলভিত্তিক নেটওয়ার্ক ধ্বংস হলেও মোবাইল সংযোগ থাকবে সচল।
এই উপগ্রহগুলোয় রয়েছে বিশেষ সিলিকন চিপ ও অ্যালগরিদম, যা সংকেত শক্তিশালী করে। এখনো শুধু এসএমএস ও লোকেশন শেয়ারিং চালু রয়েছে। তবে শিগগির ভয়েস কল ও মোবাইল ডেটা চালু হবে।
বিশ্বজুড়ে সম্প্রসারণ
বর্তমানে শুধু টেক্সট মেসেজিং চালু থাকলেও ২০২৫ সালের শেষ কিংবা ২০২৬ সালের শুরুতে ভয়েস, ডেটা এবং আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) সেবা চালু হবে বলে জানিয়েছে স্পেসএক্স। এ জন্য স্থানীয় মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে চুক্তি ও অনুমোদন প্রয়োজন।
স্পেসএক্সের লক্ষ্য হলো, ১০ হাজারের বেশি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রায় সর্বত্র নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ লাখ বর্গমাইলের বেশি এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যা দূর করতে সক্ষম হয়েছে এই প্রযুক্তি। অ্যাপ ডাউনলোড বা ডিভাইস আকাশের দিকে তাক করানোর প্রয়োজন নেই। ফোনে সাধারণভাবে টেক্সট পাঠানো যাবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি যোগাযোগ (৯১১ টেক্সটিং) এবং কৃষি, পরিবহনসহ বিভিন্ন শিল্পে আইওটি সংযোগের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে
এই মুহূর্তে শুধু টেক্সটিং সেবা চালু রয়েছে। স্যাটেলাইটের মধ্যে হ্যান্ডঅফ বা স্থানান্তরের কারণে কিছুটা দেরি হতে পারে। সাধারণ মোবাইল সিগন্যালের চেয়ে এটি বেশি ব্যাটারি খরচ করে।
ঘন জঙ্গল, পাহাড়ি উপত্যকা কিংবা কোনো কোনো সরকারের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু জায়গায় সংযোগ পেতে সমস্যা হতে পারে। ঘরের মধ্যে ব্যবহার করাও কঠিন হতে পারে, যদিও স্পেসএক্স বলছে, কিছু পরীক্ষায় জানালাবিহীন ঘরেও সংযোগ পাওয়া গেছে।
বাড়ির আশপাশে গাছপালা থাকলে সিগন্যাল ব্লক হতে পারে। আকাশ দেখা যায়, এমন স্থানে সেবা ভালো চলে।
তবে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্টারলিংকের এই ডি২সি প্রযুক্তি এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে দুর্গম ও গ্রামীণ অঞ্চলে এটি একটি বিকল্প নয়, বরং সম্ভাব্য জীবন রক্ষাকারী সমাধান। যদিও এখনো এটি সম্পূর্ণ ৫জি প্রতিস্থাপন নয়; তবে সংকটকালে বিকল্প হিসেবে ভাবা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: গালফ নিউজ
ক্রাইম জোন ২৪