৬৫ বছর পর অ্যান্টার্কটিকায় পাওয়া গেল ব্রিটিশ অভিযাত্রীর দেহাবশেষ


অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার ফলে ১৯৫৯ সালে দুর্ঘটনায় নিহত এক ব্রিটিশ অভিযাত্রীর দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে ৬৫ বছর পর। সোমবার (১১ আগস্ট) বিবিসি জানিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে পোল্যান্ডের একটি অভিযাত্রী দল অ্যান্টার্কটিকার কিং জর্জ দ্বীপের ইকোলজি গ্লেসিয়ারে কিছু হাড়, একটি হাতঘড়ি, রেডিও ও পাইপ খুঁজে পেয়েছিল। পরীক্ষার পর জানা গেছে, এগুলো ব্রিটিশ অভিযাত্রী ডেনিস টিঙ্ক বেলের। মাত্র ২৫ বছর বয়সে বরফের একটি ফাটলে (ক্রেভাস) পড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন তিনি।
ডেনিস বেল ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সে কাজের পর তিনি আবহাওয়া বিজ্ঞানে প্রশিক্ষণ নেন এবং ফকল্যান্ড আইল্যান্ডস ডিপেনডেন্সিস সার্ভের হয়ে ১৯৫৮ সালে অ্যান্টার্কটিকায় যান। সেখানে কিং জর্জ দ্বীপে একটি ছোট ব্রিটিশ ঘাঁটিতে তিনি দুই বছরের জন্য নিয়োজিত ছিলেন। মূলত আবহাওয়া বেলুন উড়িয়ে তথ্য পাঠানো, খাবারের সরবরাহ তত্ত্বাবধান এবং কুকুরের স্লেজ গাড়ি পরিচালনা—এসবই ছিল তাঁর দায়িত্ব। সহকর্মীদের কাছে তিনি হাস্যরসিক, পরিশ্রমী এবং দক্ষ রাঁধুনি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৫৯ সালের ২৬ জুলাই বেল এবং সহকর্মী জেফ স্টোকস একটি হিমবাহ পরিমাপের অভিযানে বের হন। যাত্রাপথে স্লেজ টানা কুকুরগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়লে বেল স্কি ছাড়া সামনের দিকে এগিয়ে যান এবং হঠাৎ এক গভীর ফাটলে পড়ে যান। এ অবস্থায় প্রথমে রশি দিয়ে তাঁকে টেনে তুলতে চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোমরে বাঁধা বেল্ট ছিঁড়ে গেলে তিনি আরও গভীরে পড়ে যান এবং আর কোনো সাড়া দেননি। পরে তীব্র শীত ও ঝুঁকির কারণে উদ্ধার অভিযানও বন্ধ করতে হয়।
ডেনিসের বড় ভাই ডেভিড বেল জানিয়েছেন, ১৯৫৯ সালের সেই সংবাদ ছিল পরিবারের জন্য অকল্পনীয় এক বেদনার মুহূর্ত। তাঁদের মা কখনোই এই ক্ষতি মেনে নিতে পারেননি।
পোলিশ দলটি জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইকোলজি গ্লেসিয়ার দ্রুত গলছে এবং বরফের স্রোতের সঙ্গে বেলের দেহাবশেষ স্থান পরিবর্তন করেছে। বিপজ্জনক ওই এলাকা থেকে চার দফা অভিযানে সতর্কতার সঙ্গে তাঁর হাড়, ব্যবহৃত সামগ্রী ও অন্যান্য নিদর্শন উদ্ধার করা হয়েছে।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক মনুমেন্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রড রিস জোন্স বলেছেন, ‘এটি শুধু এক অভিযাত্রীর মরদেহ ফেরানোর ঘটনা নয়, বরং এটি বিজ্ঞান ও অ্যান্টার্কটিক অনুসন্ধানের দীর্ঘ অবদানকে নতুন করে তুলে ধরার সুযোগ।’
ভাই ডেভিড বেল জানান, পোলিশ বিজ্ঞানীদের প্রতি তিনি গভীর কৃতজ্ঞ। শিগগিরই তিনি ও তাঁর বোন ভ্যালেরি ইংল্যান্ডে গিয়ে ডেনিসকে যথাযথভাবে সমাহিত করবেন। আবেগভরা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা আনন্দিত, কারণ অবশেষে আমার ভাই ঘরে ফিরেছে।’
ক্রাইম জোন ২৪