রাতে ‘আটক রেখে’ বিবাহ, পরদিন দেনমোহরের টাকা নিয়ে বিচ্ছেদ


জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর (চলতি দায়িত্ব) জাহাঙ্গীর আলমকে একাধিক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ফাতেমাতুজ্জোহুরা নামের এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
উপজেলা রিসোর্স সেন্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বাড়ি নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার উত্তর চকযাদু গ্রামে। তিনি ফার্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। চাকরির সুবাদে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ফাতেমাতুজ্জোহুরার পরিচয় হয়। সেই সুবাদে ফাতেমা তাঁকে বাড়িতে দাওয়াতের আমন্ত্রণ জানান। জাহাঙ্গীর ওই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ফাতেমার বাড়িতে যান। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিনই তাঁকে বাড়িতে আটক রেখে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহ করতে বাধ্য করেন ফাতেমা।
বিবাহের পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি দেনমোহরের ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে বিচ্ছেদ (খোলা তালাক) এবং মোকাম নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেভিট করেন তাঁরা।
সহকারী শিক্ষক ফাতেমাতুজ্জোহুরার করা একাধিক মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ঘেঁটে জানা গেছে, বিচ্ছেদের প্রায় সাত মাস পর তিনি বিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত-৪-এ যৌতুকনিরোধ আইনে মামলা করেন। পরে সেটি তিনি নিজেই প্রত্যাহার করে আবার ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এ ছাড়া তিনি নওগাঁ পুলিশ সুপারের কাছেও একটি অভিযোগ করেন।
ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধামইরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাজ্জাদ হোসেন তদন্ত করে ঘটনার কোনো সত্যতা না পাওয়ায় বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করেন। পরবর্তী সময়ে বাদী ফাতেমা আদালতে ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি প্রদান করলে আদালত আবার অধিকতর তদন্তের জন্য নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা সংস্থাকে (ডিবি) আদেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি কার্যালয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোফাজ্জল হোসেন মামলাটি ফের তদন্ত করে তিনিও ঘটনা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হওয়ায় বিবাদীকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
অন্যদিকে নওগাঁ পুলিশ সুপারের কাছে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ফাতেমাতুজ্জোহুরা। অভিযোগপত্রটি তদন্ত করেন নওগাঁ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব, পত্নীতলা সার্কেল) জয়ব্রত পাল। তিনি ঘটনাটি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ‘তাঁর অনুসন্ধানে অভিযোগকারিণী কর্তৃক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি’—এ মর্মে পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এরপর ফাতেমাতুজ্জোহুরা ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখায় জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। এই মামলার শুনানি আগামী ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পরিচয়ের সূত্র ধরে আমাকে ফাতেমা তাঁর বাড়িতে ডেকে নিয়ে আটক রেখে জোরপূর্বক ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহ সম্পন্ন করেন। ওই সময় তিনি ভিডিও করে রাখেন। বিবাহের পরদিন আমি সম্মানের ভয়ে তাঁর চাহিদামতো দেনমোহরের ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করি। উভয়ের সম্মতিতে সেটি খোলা তালাকও করা হয়। এরপর তিনি ওই ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আরও টাকা দাবি করেন। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি বিভিন্ন মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করে আমার মানসম্মান ও চাকরির ক্ষতিসাধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ফাতেমাতুজ্জোহুরা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন কথা বলতে পারব না, আমি ক্লাসে আছি।’ পরে কথা বলবেন বলে জানান।
ক্রাইম জোন ২৪