শিরোনাম

দেশসেরা মফস্বলের কৃষ্ণনগর মডেল বিদ্যালয়

দেশসেরা মফস্বলের কৃষ্ণনগর মডেল বিদ্যালয়

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে শতবর্ষ পূর্ণ হতে চলা এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেশসেরা বিদ্যালয় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯২৭ সালের ২৭ মার্চ মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের তীরে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় আজও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।

ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার গুণগত মান ও সহশিক্ষায় অসামান্য অবদান রাখায় ‘মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই বিদ্যাপীঠ। ক্রীড়া, স্কাউটস ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় উপজেলা ও জেলা পর্যায় পেরিয়ে জাতীয় স্তরে অনেকবার সাফল্য অর্জন করে দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।

শুরুতে সমিতির স্কুল বলে পরিচিতি লাভ করা বিদ্যাপীঠটি পর্যায়ক্রমে প্রাইমারি স্কুল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সর্বশেষ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় শতবর্ষী বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো জ্বালানোর পাশাপাশি এখানে হাজারো গুণীজন তৈরি হয়েছেন এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষার আলো ছড়াতে অনন্য অবদান রাখা বিদ্যাপীঠটির রয়েছে সব ধরনের কৃতিত্ব। বিদ্যালয়ের গর্বের এক অনন্য অর্জন হলো শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড। গত ১০ বছরে এখানে থেকে ১৫১ জন শিক্ষার্থী এই স্বকীয় সম্মান পেয়ে দেশে এক অনন্য রেকর্ড গড়েছেন। ২০২৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে শাপলা কাব পেয়েছেন নাফিসা বিনতে হাসান, যিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

২০০৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে এবং একই বছর জাতীয় শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে নির্বাচিত হয়। এর আগেও ১৯৯৮ সালে এই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করেছিল। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় ও সহশিক্ষার অন্যান্য বিভাগে বিদ্যালয়ের অবদান অনন্য। গত ১০ বছরে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ২৮৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি অর্জন করেছে।

স্কাউটস ও গার্ল গাইডসের কার্যক্রম বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনমুখী গুণাবলিতে সমৃদ্ধ করছে। বিদ্যালয়ের কাব স্কাউটস দল দেশসেরা হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৯ ও ১৯৯৮ সালে সহকারী শিক্ষক

মো. তোরাব আলী জাতীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদ শ্রেষ্ঠ কাব শিক্ষক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। প্রধান শিক্ষক এস এম আকিফুজ্জামান ও অন্যান্য শিক্ষক জাতীয় পর্যায়ে বিদেশ সফরের সুযোগ পান।

এস এম আকিফুজ্জামান বলেন, ‘বিদ্যালয়টি মফস্বলে অবস্থিত হলেও শিক্ষা

ও সহশিক্ষায় অনন্য এবং অনবদ্য পথচলায় শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও স্বতঃস্ফূর্ত পরিশ্রমের ফলে আজ দেশের সর্বত্র পরিচিত।’

ঝিকরগাছা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসান যোগ করেন, ‘কৃষ্ণনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধু শিক্ষা নয়, সহশিক্ষায়ও এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে; বিশেষ করে কাব স্কাউটস ক্ষেত্রে দেশসেরা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে। শাপলা কাবের ক্ষেত্রে তাদের রেকর্ড মফস্বলের মধ্যে নজিরবিহীন।’

চারটি দ্বিতল ভবনসহ পাঁচটি ভবনে মোট ২১টি শ্রেণিকক্ষ, পাঠাগার ও অফিসের সমন্বয়ে বিদ্যালয়টি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রয়েছে মধু মঞ্চ, ফুলের বাগান ও বিশাল খেলার মাঠ, যা শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button