গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং: শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ এক অভ্যাস


প্রতিদিনই আমাদের জীবনে ইতিবাচক -নেতিবাচক বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা প্রায়ই নেতিবাচক ঘটনাগুলোতেই বেশি মনোযোগ দিই। ভালো যে অনেক কিছুই ঘটছে, তা হয়তো টেরই পাই না। দিন শেষে আমরা ক্লান্ত, অভিযোগে ভরা, হতাশ। অথচ এ মানসিকতার বদল আনতে পারে একটি ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। সেটি হলো গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং।
গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং কী
এটি একটি ব্যক্তিগত চর্চা। যেখানে প্রতিদিনের জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কিছু লেখা হয়। এটি হতে পারে ‘আজ একটা নতুন কিছু শিখেছি’, ‘বন্ধু হঠাৎ খোঁজ নিয়েছে’, ‘রাস্তায় এক শিশু হাসিমুখে তাকিয়েছে’—এই ছোট ছোট ভালো লাগার মুহূর্তগুলোর কৃতজ্ঞতা স্মরণই হলো গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং। অনেকটা নিজের ভালো লাগার ডায়েরি বলা যায় একে।
শিক্ষার্থীদের জন্য কেন এটি জরুরি
বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জীবনে চাপ অনেক। পড়াশোনার প্রতিযোগিতা, ক্যারিয়ারের দুশ্চিন্তা, পারিবারিক প্রত্যাশা, সামাজিক তুলনা—এসব মিলে তাঁরা প্রায় মানসিকভাবে ক্লান্ত থাকেন। এই ক্লান্তি থেকে মুক্তির জন্য দরকার নিজের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা, নিজের ভেতরটা বোঝা। সে কাজটি সহজ করে দেয় গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং।
এই অভ্যাসের সুফল কী কী
- ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলে: কৃতজ্ঞতার চর্চা আমাদের নেতিবাচক ভাবনা কমায় এবং ভালো দিকগুলো দেখতে শেখায়।
- চাপ কমায়: গবেষণায় প্রমাণিত, কৃতজ্ঞতা মস্তিষ্কের ডোপামিন ও সেরোটোনিন নিঃসরণ করে, যা মানসিক চাপ হ্রাস করে।
- আত্মবিশ্বাস বাড়ায়: যখন কেউ নিজের ছোট অর্জনকেও মূল্য দিতে শেখে, তখন আত্মসম্মানবোধ তৈরি হয়।
- নিজেকে ভালোবাসতে শেখায়: নিজ জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়লে, আত্মতুষ্টি ও শান্তি অনুভব হয়।
কীভাবে শুরু করবেন
শুরুটা খুব সহজ। একটা খাতা বা নোটবুক নিয়ে প্রতিদিন তিনটি করে বিষয় লিখুন, যেগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। সময়টা হতে পারে সকালে ঘুম থেকে উঠে বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। যেমন: ‘আজ নতুন শব্দ শিখেছি’। ‘আজ মন খুলে হাসতে পেরেছি’। ‘একজন শিক্ষক আমার কাজের প্রশংসা করেছেন’। শুধু লেখার মাধ্যমে নয়, চাইলে ছবি এঁকে, কবিতা বা গান দিয়ে কিংবা নিজের মতো করে প্রকাশ করলেও চলবে। মূলকথা হলো, ভালো কিছুর প্রতি নিজের সচেতনতা তৈরি করুন।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা
আমাদের শিক্ষার্থীরা খুব কমই নিজের ভালো দিকগুলো নিয়ে ভাবেন। সব সময় প্রতিযোগিতা আর তুলনার চাপে তাঁরা ছোট হতে হতে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। বিশেষ করে যাঁরা মফস্বল বা গ্রামীণ এলাকা থেকে উঠে আসেন, তাঁদের মধ্যে একধরনের আত্মসংকোচ কাজ করে। এই অবস্থায় গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং তাঁদের আত্মমর্যাদা ও স্বস্তির জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারে।
বিশ্বব্যাপী গবেষণার প্রমাণ
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং করেন, তাঁরা বেশি সুখী, তাঁদের হতাশা কম, ঘুম ভালো হয় এবং সম্পর্কও উন্নত হয়।
একটি কৃতজ্ঞ মন মানে একটি শান্ত হৃদয়
শুধু পরীক্ষার ফল বা সিজিপিএ দিয়ে জীবনকে মাপা যায় না। ভালো থাকার জন্য দরকার ভালো দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। কৃতজ্ঞতা সে দৃষ্টিভঙ্গিই তৈরি করে। আর সে কৃতজ্ঞতার অভ্যাসই গড়ে তুলতে পারে গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং।
গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং নিজেকে বোঝা, নিজের অনুভূতিকে সম্মান জানানো এবং জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার এক অন্তর্মুখী চর্চা। শিক্ষার্থীরা যদি প্রতিদিন কয়েক মিনিট সময় নিয়ে নিজেদের ভালো লাগা মুহূর্তগুলো লিখে রাখেন, তাহলে তাঁরা জীবনকে আরও সুন্দরভাবে অনুভব করতে শিখবেন। তাই আজ থেকে শুরু হোক এই ছোট যাত্রা—একটি খাতা, একটি কলম, আর কৃতজ্ঞতাভরা মন নিয়ে।