শিরোনাম

নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমরা দেব, কোনো সমস্যা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমরা দেব, কোনো সমস্যা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে কোনো সমস্যা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমরা দেব, এতে কোনো সমস্যা হবে না।’

গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তিকে সামনে রেখে অর্থনীতি কতটা এগিয়েছে— সাংবাদিকদের এমন নানা প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ বুধবার সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষেই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি মুল্যায়ন প্রশ্নে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘অর্থনীতি এক সময় প্রিকরিয়াস, অর্থাৎ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এখন কিছুটা স্বস্তির জায়গায় এসেছি। কিন্তু এখনো সামনে রয়েছে মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, জ্বালানি, এবং শুল্ক সংক্রান্ত একাধিক চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ধীরতা এসেছে, সেটায় গতি ফেরানো এবং ব্যবসায়ী মহলে আস্থা ফিরিয়ে আনা।’

তবে তিনি সতর্ক করেছেন, এই উত্থান এখনো ভাসাভাসা পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে না, বরং বোঝার জন্য প্রয়োজন গভীর অন্তর্দৃষ্টি। অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তি মজবুত করতে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং বাণিজ্যিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

সরকারের বর্তমান উন্নয়ন কৌশল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, যেন ব্যবসা সহজ হয় এবং অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হয়।’

মূল্যস্ফীতির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি এখনো স্বস্তির পর্যায়ে না পৌঁছালেও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে। বিশেষ করে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে চ্যালেঞ্জটা বেশি। তার ভাষায়, ‘মূল্যস্ফীতি এমন নয় যে ঘোড়ার রাশ ধরে টান দিলেই থেমে যাবে। একে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।’

বাজেট ঘাটতি ও নির্বাচন-সংক্রান্ত অর্থের যোগান বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমরা দেব, এতে কোনো সমস্যা হবে না। বাজেট ঘাটতি এখন পর্যন্ত সাময়িক হিসাবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আমাদের ঘোষিত সীমা ৪ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন জানান, কিছু তাৎক্ষণিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, কিছু আবার মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় রয়েছে। ‘ব্যাংক রেজুলেশন বিষয়ে কিছুটা সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে। ক্যাপিটাল মার্কেটেও উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। এনবিআরের ক্ষেত্রে দ্রুত কিছু সংশোধনী আনা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি আশা করছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৩৫ শতাংশ থেকে তা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হয়নি এবং এতে আরও দরকষাকষির সুযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরেকটু কমলে ভালো হতো জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তবে যেটা হয়েছে, তা মোটামুটি। একে এখনই স্বস্তির জায়গা বলা যাবে না। আমরা তো চাই এই পাল্টা শুল্কই না থাকুক। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যদি দেখা হয়, বাংলাদেশ এখনো তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমাদের তৈরি পোশাক খাত ভালো করছে, নিট এবং টেক্সটাইল পণ্য যুক্তরাষ্ট্র সহজেই মানিয়ে নিতে পারবে। ওয়েভিং খাত কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারে।’

চুক্তি বিষয়ে তিনি জানান, এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়নি। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমদানি-শুল্ক কাঠামো ও সম্ভাব্য ছাড়পত্র নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এই আলোচনা অনেক ক্ষেত্রেই গোপনীয় রাখতে হয়।

তিনি বলেন, ‘এটা মাল্টিলেটারাল নেগোশিয়েশন নয়, যে সবার জানা থাকবে। এখানে ওয়ান-টু-ওয়ান নেগোশিয়েশন হচ্ছে। ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, কোরিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো আছে। তাই সব তথ্য বলা সম্ভব নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী মহলের মনোভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইউএস চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা বলেছে— তোমরা শেভরন ও মেটলাইফের টাকা ফেরত দিয়েছো, অর্থ আটকে রাখো না। এতে বোঝা যায়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।’

সব মিলিয়ে অর্থ উপদেষ্টার ভাষায়, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালেও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে দীর্ঘ পথ এখনো বাকি। এই পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরানো, নীতি নির্ভরতা নিশ্চিত করা এবং কাঠামোগত সংস্কারে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button