টিকটকে প্রেম-গোপনে বিয়ে, অতঃপর লাশ হয়ে ফিরলেন কলেজছাত্র


চার বছর আগে টিকটকে পরিচয় হয় ঠাকুরগাঁওয়ের কলেজছাত্র গোলাম ফেরদৌস দুর্লভের সঙ্গে সিরাজগঞ্জের এক কলেজছাত্রীর। এরপর প্রেম, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে গোপনে বিয়ে করেন তাঁরা। তবে গত দুই সপ্তাহ স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ওই কলেজছাত্রী, ব্লক দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
গত রোববার রাতে পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে সিরাজগঞ্জে যান গোলাম ফেরদৌস দুর্লভ। সেখান থেকে সোমবার মোবাইল ফোনে স্বজনদের কাছে খবর আসে ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ে আছে দুর্লভের লাশ। রাতেই ছুটে যান স্বজনেরা। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাঁকে দাফন করা হয়।
পরিবারের অভিযোগ, সরকারি চাকরিজীবী ছেলে পেয়ে মেয়ের পরিবার দুর্লভকে ডেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনার তদন্ত ও জড়িতদের বিচারের দাবি জানায় তারা।
গোলাম ফেরদৌস দুর্লভ ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের পাতিলভাসা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আব্দুর রহমানের ছেলে এবং লাহিড়ী ডিগ্রি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সোমবার সকালের দিকে কামারখন্দ উপজেলার চৌবাড়ি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় গোলাম ফেরদৌস দুর্লভ বিষ পান করেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। কলেজছাত্রীর বাবা স্থানীয়দের সহায়তায় প্রথমে সদর হাসপাতাল, সেখান থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার পথে মারা যায় দুর্লভ।
পরে তাঁর লাশ শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
আজ বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, অবসর প্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক বাবা ছেলে হারানোর শোকে বাক্রুদ্ধ। মা কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। পরিবারের ছোট ছেলে ছিলেন দুর্লভ। তাঁর বাবার স্বপ্ন ছিল তাঁকে পড়াশোনা করিয়ে পুলিশ বানাবেন। সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে তাঁদের।
দুর্লভের ভাই সৌরভ আলি বলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের হলফনামা রয়েছে, মুনশি মোহর হয়েছে। মেয়েটি তাঁকে শর্ত দিয়েছিল কিছু টাকা এবং স্বর্ণ জোগাড় করে নিয়ে যেতে, সেজে সে আমাদের বাড়িতে আসবে। এ জন্য সে বউ নিতে গেছে। সেখানে গিয়ে শোনে মেয়ের সরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বিয়ের কাগজপত্র দেখানোর পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে আমার ভাইকে তাঁরা হত্যা করেছেন।’
মা আমিনা শিরিন বলেন, ‘ছেলের অপরাধ পেলে তাকে বেঁধে রাখুন, পুলিশে দেন। মেরে ফেললেন কেন? আমি এ ঘটনার তদন্ত চাই, জড়িতদের শাস্তি চাই। আমার স্বামী অসুস্থ, একটু কথা বলতে পারত, ছেলেকে দাফন করে এসে বাক্রুদ্ধ। কথাই বলতে পারছে না।’ এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ থানায় মামলা করবেন বলে জানান তিনি।
তবে এ নিয়ে কলেজছাত্রীর পরিবার কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। একটি ভিডিওতে কলেজছাত্রীর মা দাবি করেছেন, কলেজছাত্র দুর্লভ তাঁদের বাড়িতে আসেনি। মোবাইলে কথা বলেছে।
এ বিষয়ে কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ জানান, ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারকে হস্তান্তর করেছে সিরাজগঞ্জ সদর থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় ওই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। পরিবার যদি এ ঘটনায় মামলা করে, তাহলে পুলিশ তদন্ত করে রহস্য উন্মোচন করবে।