শিরোনাম

বালুর গর্তে মিলল নিখোঁজ ২ শিশুর লাশ—গলায় রশি, বুকের হাড় ভাঙা

বালুর গর্তে মিলল নিখোঁজ ২ শিশুর লাশ—গলায় রশি, বুকের হাড় ভাঙা

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ বুধবার দুই শিশুর বাড়ি থেকে ৩০০ মিটার দূরে একটি অবৈধ বালুর পয়েন্ট থেকে এই লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শিশু দুটিকে হত্যা করা হয়েছে।

তারা হলো উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙি পাইকান এলাকার জাকিরুল ইসলামের ছেলে মারুফ মিয়া (৬) ও একই এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুর রহমান (৭)। দুজনেই নগরবন্দ বড়াইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থী।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মারুফ মিয়া ও আব্দুর রহমান দুজনেই নগরবন্দ বড়াইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার স্কুল বন্ধ থাকায় সকালে তারা দুই বন্ধু মিলে খেলতে বের হয়।

এরপর আর তারা বাড়িতে ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আজ বেলা ২টার দিকে ওই বালুর পয়েন্টটিতে নেমে খোঁজ করতে নামলে এ সময় মারুফ মিয়ার মরদেহ পাওয়া যায়। তার গলায় বাঁধা রশি ও একটি বোতল পাওয়া যায়। পরে গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের লোকজন আব্দুর রহমান নামে আরও এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে।

আখতারুজ্জামান মুকুল নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আজ সকালে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আশপাশের পুকুরগুলোতে খোঁজাখুঁজি করে। আমি বেলা দেড়টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে আমার সন্দেহ হয়, বালুর পয়েন্টে দুই শিশু পড়তে পারে, সেই থেকে আমি বালুর পয়েন্টে নামতে গেলে বালুর পয়েন্টের মালিক আজহারুলের ভাগিনা মনু মিয়া আমাকে বাধা দেন।’

শিশুদের পরিবারের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুদের পরিবারের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি বলেন, ‘এ সময় মনু মিয়া আমাকে গালিগালাজ করেন, পরে আমি জোর করে গর্তে নামতেই একটি শিশুর হাত আমার হাতে লাগে। পরে আমি মরদেহটি ওপরে তুলে দেখি শিশু মারুফের এটি। শিশুটির বুকের সবকটি হাড় ভাঙা ছিল। গলায় রশি বাঁধা ও বোতল পাওয়া যায়। পরে পাশে থাকা ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আব্দুর রহমান নামে আরও এক শিশুর লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করেন। আমাদের ধারণা, শিশু দুটিকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের দাবি, সঠিক তদন্ত করে এর সত্যতা উদ্‌ঘাটন করা হোক।’

জানতে চাইলে গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বেলা পৌনে ১১টার দিকে ৯৯৯ নম্বর থেকে একটি ফোন পাই যে, আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙি পাইকার নামের এলাকায় ঘাঘট নদীতে দুটি শিশু পড়ে গেছে। এই খবর শুনে ডুবুরি টিমকে অবহিত করি।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

‘আমাদের রংপুর থেকে ডুবুরি টিম আসে। এর মধ্যে আমরা আশপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। পাশেই বালু তোলা গর্তে মুকুল নামের এক লোক নেমে একটা বাচ্চা উদ্ধার করে। পরে আমাদের ডুবরি দল সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম করে আরও একটি শিশু উদ্ধার করে।’

শিশু মারুফের বাবা জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল থেকে মারুফকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমরা ওই বালুর পয়েন্টে অনেকবার খুঁজতে চেষ্টা করছি। আজহারের লোকজন আমাদের খুঁজতে দেয়নি। আজকে ওই বালুর পয়েন্ট থেকেই আমার ছেলের লাশ পেলাম। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের সঠিক বিচার চাই।’

মারুফের মা রাশেদা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘হামার ছওয়াক ওমরা মারি ফেলাইছে। হামরা তো কারও ক্ষতি করি নাই। হামার ছওয়াক কেনে মারিল। হামরা বিচার চাই। আর কিছু চাই না।’

এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, ‘শিশু দুটির মৃত্যু নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। তাই আমরা শিশু দুটির লাশ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। সেখানকার রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button