দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনের ঘটনায় ঢাবি প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে এই ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে সংগঠনটি।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে জানায়, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিজয়ের প্রথমবার্ষিকীতে টিএসসিতে শিবিরের উদ্যোগে প্রদর্শিত ছবিতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যায় জড়িত রাজাকারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগকে অবমাননা করেছে। সংগঠনটি বলেছে, এটি ৭১ কে ২৪ এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর ঘৃণ্য প্রচেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি চরম অসম্মান।
বিবৃতিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরবর্তীতে প্রতিবাদী ছাত্র সংগঠনগুলোর চাপের মুখে প্রক্টরিয়াল টিম ধীর গতিতে ছবি সরালেও ততক্ষণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক নেটওয়ার্কের অভিযোগ, সময়মতো ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি এভাবে উত্তপ্ত হতো না।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতিবাদের সময় একজন ব্যক্তি নারীদের আপত্তিকর ভিডিও ধারণের চেষ্টা করছিল, যাকে পরে শিবিরের সক্রিয় সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রশাসনের ব্যর্থতায় নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, অথচ বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকার পরও এ ঘটনা ঘটেছে, যা প্রশ্নবিদ্ধ।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক প্রক্টরের সমালোচনায় বলেছে, ৫ আগস্টের মতো দিনে এ ঘটনা ঘটতে দেওয়ার মাধ্যমে প্রক্টর নিজের অক্ষমতা আবারও প্রমাণ করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধের সম্মান বজায় রাখা প্রশাসনের সাংবিধানিক দায়িত্ব, যা তারা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সংগঠনটি দাবি করেছে, ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা না করার অঙ্গীকার করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে স্পষ্ট নির্দেশনা জারি করতে হবে; প্রক্টরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে; ইন্টারনেটের মাধ্যমে নারীদের হয়রানিতে জড়িত গ্রুপ ও সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রচার ও সংরক্ষণে স্থায়ী উদ্যোগ নিতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গত বছর আগস্টের পর থেকে ক্যাম্পাসে হত্যাকাণ্ড, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আমলে না নেওয়া, চারুকলার শোভাযাত্রায় আগুন দেওয়ার মতো একাধিক ঘটনায় প্রশাসনের গাফিলতি দেখা গেছে। যারা চব্বিশের নাম দিয়ে একাত্তরকে অবমূল্যায়ন করে, তারা আসলে দুই ইতিহাসকেই কলঙ্কিত করছে।