শিরোনাম

খাল দখল কোম্পানির চার মাঠে জলাবদ্ধতা

খাল দখল কোম্পানির চার মাঠে জলাবদ্ধতা

ফরিদপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানির বিরুদ্ধে সেতু-কালভার্টসহ খাল দখলের অভিযোগ উঠেছে। এতে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে চারটি মাঠের প্রায় ২ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আশপাশের গ্রামগুলোর প্রায় ৮ হাজার কৃষক।

সম্প্রতি জেলা সদরের শিবরামপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কসংলগ্ন কয়েক একর জায়গাজুড়ে মামুন গ্রুপ নামের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে মহাসড়কসংলগ্ন একটি সেতুর এক পাশ থেকে সরকারি খাল ভরাট করে প্রতিষ্ঠানটির ক্যানটিন ও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করা হয়েছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী সাহাপাড়ায় একটি কালভার্টের এক পাশে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে পানি নামার পথ বন্ধ হয়ে ঈশান গোপালপুর ও মাচ্চর ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি খাদ, টেংরামারা বিল, আধারমারা বিল ও তলাপত্তর বিল নামের চারটি ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। মাঠে আবাদ করা আমন ধান তলিয়ে রয়েছে। যদিও ভরাট করা অংশে পাইপ বসিয়ে নালা করা হয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে পানি নামছে খুবই ধীরে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এসব মাঠে দুটি ইউনিয়নের শিবরামপুর, সাহাপাড়া, রসুলপুর, রুদ্রপাড়া, সুনাউল্লাহ পাড়া, বাছের কাজীর পাড়া, ফতেহপুরসহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ফসলি জমি রয়েছে। মাঠে ধান, পাট, তিলসহ নানা ফসলের চাষাবাদ হয়। এখন কয়েক বছর ধরে ফসল উৎপাদন প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।

রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই মাঠগুলো ছিল কৃষিবান্ধব। এমন সময়ে মাঠে আমন ধানের চাষবাদ হতো। মামুন গ্রুপ হওয়ার পর থেকে ৮-১০ বছর ধরে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তারা কয়েক বছর আগে শতবর্ষী বাঁশেরহাট খালটি দখল করেছে। বর্তমানে ধানের চারা ডুবে গেছে, ধান লাগানোর কোনো অবস্থা নেই। বৃষ্টিতে ২-৫ ফুট পানি হয়ে গেছে। আগে বৃষ্টি হলে খাল দিয়ে পানি কুমার নদে চলে যেত। কিন্তু খাল ভরে ফেলায় কয়েক বছর ধরে আমরা ভুগেছি। প্রতিবছর কমপক্ষে ১০ হাজার মণ ধান উৎপাদন কমে গেছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’

আরেক কৃষক আক্তার হোসেন সিদ্দিক বলেন, ‘বিষয়টি মামুন গ্রুপকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ বছর বেশি বৃষ্টি হওয়ায় আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’

এমন অবস্থায় গত রোববার দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে জেলা কৃষক সমিতির উদ্যোগে মানববন্ধন করেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। তাঁরা খাল পুনরুদ্ধার ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন কৃষিজমির ক্ষতি করে আসছেন। প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধমকি দেন। পরে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেন কৃষকেরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড মো. শফিকুল ইসলাম।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান বলেন, ‘বিষয়টি জানামাত্র এসি ল্যান্ডকে তদন্তে পাঠানো হয়। সরকারি খাল দখলের প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যোগাযোগ করা হলে মামুন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহিন সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছি, আমি এর কিছুই জানি না। যদিও পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন করে দিয়েছি। আমি কারও ক্ষতি চাই না।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button