প্রাণীর প্রতি দয়াপরশ হতে শেখায় ইসলাম


এই পৃথিবীটা কেবল মানুষের বিচরণক্ষেত্র নয়। নদী-নালা, গাছপালা, পশুপাখি, প্রকৃতি ও মানুষ প্রভৃতির সমন্বয়েই সুন্দর পৃথিবী। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে পৃথিবীকে সমস্ত মাখলুকের বিচরণযোগ্য রাখা এবং প্রাণীজগতের ওপর দয়াশীল হওয়া মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার পাশাপাশি প্রাণীদের প্রতিও দয়াশীল হতে শেখায় ইসলাম। তাদের অহেতুক কষ্ট দেওয়া চরম গর্হিত কাজ। এর পরিণতি ভয়াবহ। আর তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে আল্লাহর নিকট রয়েছে মহা পুরস্কার।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তীব্র গরমে কোনো এক ব্যক্তি হাঁটছিল। পথিমধ্যে সে তৃষ্ণার্ত হয়ে কুপে নেমে পানি পান করল। তৃষ্ণা নিবারণ করে সে কুপ থেকে উঠে দেখল একটি কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাঁদা খাচ্ছে। সে বুঝতে পারল—কুকুরটি তার মতোই তৃষ্ণার্ত। অতঃপর সে পুনরায় কুপে নেমে নিজের (চামড়ার) মোজায় ভরে পানি এনে কুকুরকে পান করালো। আল্লাহ তাআলা তার এ কাজটি পছন্দ করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলে আমরা কি প্রতিদান পাব?’ তিনি বললেন, ‘সব প্রাণীর উপকারের প্রতিদান রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি: ২৩৬৩)
পশু প্রাণীদের প্রতি দয়াপরশ হতে স্বয়ং মহানবী (সা.) আদেশ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দয়াবানদের প্রতি আল্লাহও দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীবাসীর (মানুষ, পশুপাখি প্রভৃতি) ওপর দয়া করো, আসমানে যিনি আছেন তিনিও তোমাদের ওপর দয়া করবেন।’ (জামে তিরমিজি: ১৯২৪)
একদিন একটি গাধার চেহারা লোহা দিয়ে দাগানো হয়েছে দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) এতটাই কষ্ট পেলেন যে—এটা যে করেছে তার ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত করলেন। উম্মতের প্রতি দয়াশীল নবী এমন অভিশাপ-বাক্য জীবনে খুব কমই উচ্চারণ করেছেন। (সহিহ মুসলিম: ২১১৮)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে প্রাণী জগতের ওপর দয়াশীল হওয়ার তওফিক দান করুন।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।