কলেজ অধ্যক্ষের মামলায় পরীক্ষার্থীকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ


বগুড়ার শাজাহানপুরে গোহাইল ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে পিটিয়ে আহত করে নিজের মামলায় গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছে ওই কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের জামাদারপুকুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীর নাম রাহাদ হোসেন রিয়াদ (১৭), সে ওই ইউনিয়নের শালিখা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে। বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে গোহাইল ইউনিয়নের খাদাশ গ্রাম থেকে রিয়াজকে তুলে নিয়ে জামাদারপুকুর তেলের পাম্পের পাশের টিনের ঘরে আটকে রেখে পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। সন্ধ্যায় তাকে থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ রিয়াজকে তার কলেজের অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেনের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।
পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়, রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য পুলিশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
আরও জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গোহাইল ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখেন। তবে বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেন তিনি।
গত ২২ জুলাই বহিরাগত লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বহিরাগত লোকজন কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপরে হামলা করলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক অবরোধসহ মোতাহার হোসেনের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন গত ২৫ জুলাই আট শিক্ষার্থী-অভিভাবক, অজ্ঞাতনামা ছয়জনসহ মোট ১৪ জনকে আসামি করে থানায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির মামলা করেন। মামলায় দুজন ছাত্রীকে ৭ ও ৮ নম্বর আসামি করা হয়। মামলার ১ নম্বর আসামি রাহাদ হোসেন রিয়াদ।
ঘটনার রাতেই বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রাহাদ হোসেন রিয়াদের। সে জানায়, ‘অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন স্যার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে আমার ওপরে হামলা করিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে খাদাশ গ্রাম থেকে সন্ত্রাসী রকি, ইমরান ও সোহানের নেতৃত্বে কয়েকজন আমাকে খাদাশ গ্রাম থেকে জামাদারপুকুর তেলের পাম্পের পাশে একটি টিনের ঘরে তুলে নিয়ে যায়।
‘সেখানে লোহার রড ও পাইপ দিয়ে আমাকে পিটিয়ে আহত করে এবং বাম পায়ে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় আমি অচেতন হয়ে পড়ি এবং মাগরিবের আজানের সময় জ্ঞান ফিরলে দেখি, পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
‘পুলিশ প্রথমে আমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এরপর থানায় নিয়ে রেখে রাত ১২টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। আমি এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং বুধবার (আজ) আমার ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষা। আমি আর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব না।’
হাসপাতালে রিয়াদের বড় বোন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ভাইকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে মোতাহার হোসেন পিটিয়েছেন। আমার ভাইকে মেরে চিকিৎসা না দিয়ে থানায় আটকে রেখেছিল। আমরা থানায় গিয়ে অনেকটা জোর করে হাসপাতালে এনেছি। আমরা এর প্রতিকার চাই।’
এ বিষয়ে কথা বলতে গোহাইল ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিলে নারী কণ্ঠে একজন বলেন, ‘মোতাহার হোসেন ঘুমাচ্ছেন। এখন তাঁর সঙ্গে কথা বলা যাবে না।’
জানতে চাইলে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেনের মামলায় রিয়াদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।