শিরোনাম

৩৫০ বছরের ইতিহাসে ব্রিটিশ রাজপরিবারে প্রথম নারী জ্যোতির্বিদ

৩৫০ বছরের ইতিহাসে ব্রিটিশ রাজপরিবারে প্রথম নারী জ্যোতির্বিদ

গ্রহ-নক্ষত্র আর মহাবিশ্বের মতিগতি বোঝার জন্য রাজপরিবারে একজন জ্যোতির্বিদ থাকবেন না, তা কি হয়? সে কারণে প্রায় ৩৫০ বছর আগে, ১৬৭৫ সালে রাজা দ্বিতীয় চার্লস ব্রিটিশ রাজপরিবারে একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীকে নিয়োগ দেন। এই মর্যাদাপূর্ণ পদকে বলা হয় ‘অ্যাস্ট্রোনমার রয়্যাল’।

এই পদে প্রথম অ্যাস্ট্রোনমার রয়্যাল ছিলেন জন ফ্ল্যামস্টিড। তিনি গ্রিনিচ অবজারভেটরি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি; যেমন জন ফ্ল্যামস্টিড, এডমন্ড হ্যালি, স্যার ফ্রাঙ্ক ডিজনিস এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। অ্যাস্ট্রোনমার রয়্যাল পদে নিযুক্ত ব্যক্তির কাজ হলো, ব্রিটিশ সরকারের; বিশেষ করে নৌবাহিনীর জন্য মহাকাশ ও সময়-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।

৩৫০ বছরে অ্যাস্ট্রোনমার রয়্যাল পদ ছিল পুরুষদের দখলে। অর্থাৎ নারীদের ওই পদের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়নি। কিন্তু এ বছর ব্রিটিশ রাজপরিবার সেই প্রথা ভেঙে অ্যাস্ট্রোনমার রয়্যাল পদে নিয়োগ দিয়েছে এক নারীকে। নাম মিশেল ডাউহার্টি। গত ৩০ জুলাই যুক্তরাজ্যের বর্তমান রাজা এই নিয়োগে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি স্যার মার্টিন রিসের স্থলাভিষিক্ত হলেন। বর্তমানে পদটি প্রতীকী। মিশেল ডাউহার্টি আবহাওয়া ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করবেন। তবে বিজ্ঞান নীতি ও জনসচেতনতায় তাঁর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

প্রার্থী হিসেবে মিশেল ছিলেন হেভিওয়েট। শুধু যে ৩৫০ বছর পর ‘প্রথম নারী’ হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন, তা নয়; তিনি রয়্যাল সোসাইটির ১০২ বছরের ইতিহাস ভেঙে দ্বিতীয় নারী হিসেবে হিউস মেডেল পেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ গবেষণা পদ রয়্যাল সোসাইটি রিসার্চ প্রফেসরশিপ পান ২০১৪ সালে। তার আগে ২০০৭ সালে ইনস্টিটিউট অব ফিজিকস থেকে গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র ও বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সৌর বাতাসের পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে গবেষণার জন্য মিশেল ক্রি মেডেল পান। রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে পদার্থবিজ্ঞান ও মহাকাশবিজ্ঞানে বিশেষ গবেষণার জন্য স্বর্ণপদক পান তিনি। তাঁর গবেষণাটি ছিল স্যাটার্ন ও বৃহস্পতির দিকে পাঠানো মহাকাশযানগুলোর ডেটা বিশ্লেষণের ওপর। ২০১৯ সালে মহাকাশবিজ্ঞান গবেষণায় তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয় আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন থেকে।

মিশেল ডাউহার্টি এখন ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডনের স্পেস ফিজিকসের অধ্যাপক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি মহাকাশ গবেষণায় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির একটি মিশনের প্রধান পরীক্ষক। ওই মিশনে বৃহস্পতির বরফাচ্ছন্ন উপগ্রহগুলো; যেমন গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো, ইউরোপা নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।

কর্মক্ষেত্রে মিশেল যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে। গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, অ্যাস্ট্রোনমার রয়্যাল হিসেবে এই নিযুক্তি শুধু তাঁর জেন্ডারের ভিত্তিতে হয়নি, এর পেছনে রয়েছে নিজস্ব বৈজ্ঞানিক যোগ্যতা। তিনি আশা করেন, এই অর্জন অন্য নারীদের বিজ্ঞানচিন্তার পথে চলতে অনুপ্রাণিত করবে। রেডিও ফোরের ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যখন তাঁরা তাদের মতো কাউকে এমন একটি পদে দেখতে পায়, তখন তাদের মনে স্বপ্ন জন্ম নিতে পারে যে তারাও ভবিষ্যতে এমন কিছু করতে পারবে।’

মিশেল ডাউহার্টি। ছবি: সংগৃহীত
মিশেল ডাউহার্টি। ছবি: সংগৃহীত

১৯৬২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম মিশেল ডাউহার্টির। বাড়ির উঠানে বাবার ১০ ইঞ্চি টেলিস্কোপ তৈরি দেখে মহাকাশের প্রতি আগ্রহ জন্মে তাঁর। মিশেল পড়াশোনা করেছেন একটি বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখানকার পাঠ্যক্রমে পদার্থবিজ্ঞান ছিল না। তিনি নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থাৎ বর্তমান কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিত বিষয়ে বিএসসি সম্পন্ন করেন। তারপর সেখানে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক এবং পরে পিএইচডি করেন। মিশেল তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমিতে। সেখানে তিনি সৌর ও গ্যালাকটিক উইন্ড-সম্পর্কিত গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ১৯৯১ সালে তিনি ইম্পেরিয়াল কলেজে যোগ দেন। কিছুদিন পর তাঁকে জুপিটারে ইউলিসিস মহাকাশযান উড়ে যাওয়ার সময়ের জন্য চৌম্বক ক্ষেত্রের একটি মডেল তৈরি করতে বলা হয়। এটি ছিল তাঁর মহাকাশ পদার্থবিদ্যায় যাত্রার সূচনা।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button