শিরোনাম

ইলিশ রানি জান্নাতুল মাওয়া

ইলিশ রানি জান্নাতুল মাওয়া

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ জান্নাতুল মাওয়া। তাঁকে অনেকে চেনে অনলাইনে চাঁদপুরের ইলিশ ও নদীর সুস্বাদু তাজা মাছ বিক্রির জন্য। এখন তিনি ‘ইলিশ রানি’ নামে বেশ পরিচিত। জীবন তাঁকে টেনে এনেছে এখানে।

বিয়ে ও লেখাপড়া

দাদির আবদারে ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় ২০০০ সালে বিয়ে হয় জান্নাতুল মাওয়ার। মায়ের ইচ্ছাপূরণে নিজ মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে অনুশোচনায় ভুগছিলেন মাওয়ার বাবা। বিয়ের পর সাংসারিক কাজের মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি। এর মধ্যেই তাঁর কোলজুড়ে আসে প্রথম সন্তান। সন্তানের বয়স যখন পাঁচ বছর, মাওয়া সে সময় নীলকমল ওসমানীয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে বিএ ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করছেন মাওয়া।

সংসারের চিন্তায় অনলাইন উদ্যোগ

মাওয়া নিজের অবসর সময় কাজে লাগাতে ঘরে বসেই শিখতে থাকেন হাতের কাজ। এর মধ্যে ২০২১ সালে হঠাৎ মারা যান তাঁর বাবা। এই মৃত্যুতে তিনি বেশ ভেঙে পড়েন। ধীরে ধীরে শোক কাটিয়ে ওঠেন তিনি।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

এদিকে প্রবাসী স্বামী ফিরে আসেন দেশে, পাকাপাকিভাবে। এ খবরে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সংকটের নিদারুণ চিত্র ভেসে ওঠে তাঁর চোখের সামনে। স্বামীর অর্থনৈতিক দুরবস্থা আর সামাজিক সংস্কারের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজের সন্ধান করতে পারতেন না। এ সময় সংসার খরচ আর সন্তানদের ভরণপোষণের কথা চিন্তা করে ‘নিজের বলার মতো একটি গল্প’ নামে একটি ফাউন্ডেশন থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা। ফেসবুকে তাঁর পেজের নাম ‘ইলিশ রানি’। তাঁর পণ্য হয়ে ওঠে চাঁদপুরের ইলিশসহ নদীর অন্যান্য তাজা মাছ। নিজের চেষ্টা আর মেয়ে সাবিকুন নাহারের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে থাকেন মাওয়া।

নিজের চলার পথে হাজীগঞ্জ ই-কমার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেয়েছেন মাওয়া। তিনি জানিয়েছেন, ঘর সামলানোর পাশাপাশি নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে চেয়েছিলেন সব সময়। পরিবার ও সমাজের কথা বিবেচনায় রেখেও অনলাইন মাধ্যম কাজে লাগিয়ে সেটা হতে পেরেছেন তিনি। প্রবাসফেরত স্বামীর ওপর সংসারের সম্পূর্ণ দায় চাপিয়ে দিতে চাননি তিনি।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কাজে লেগেছে অবসরের কাজ

সংসারের কাজের পাশাপাশি হাতের বিভিন্ন কাজ শিখেছিলেন জান্নাতুল মাওয়া। সেগুলো শেখার সময় তিনি ভাবতে থাকেন, কিছু একটা করতে হবে। তখন থেকে শুরু করেন অন্যদের শেখানো। পরে ধীরে ধীরে এটি তাঁর ভালো লাগার জায়গা হয়ে যায়। একটা সময় মাওয়ার মনে হয়, সংসার ও সন্তানদের রেখে তো আমার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হবে না। স্বামী পরিবারের বড় ছেলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রবাসী হয়েছিলেন। ফলে নিজে কিছু করার তাড়না ছিল।

সেটা বাস্তব হয়েছে। বাকি জীবন এভাবেই কাটিয়ে দিতে চান জান্নাতুল মাওয়া।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button