শিরোনাম

আন্দোলনে যারা রাস্তায় ছিল, তারাই জুলাইয়ের আসল মাস্টারমাইন্ড: প্রকাশনা উৎসবে বক্তারা

আন্দোলনে যারা রাস্তায় ছিল, তারাই জুলাইয়ের আসল মাস্টারমাইন্ড: প্রকাশনা উৎসবে বক্তারা

জুলাই আন্দোলনের দিনগুলোতে গুলি করে মানুষকে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে গুলি করে মানুষকে দমানো যায় না, ইতিহাসেই তার প্রমাণ রয়েছে। জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড কে, তা নিয়ে নানাজন নানা রকম দাবি করেন। প্রকৃতপক্ষে জুলাইয়ের আসল মাস্টারমাইন্ড তারাই, যারা সে সময় রাস্তায় ছিল।

আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ‘উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রকাশনা সংস্থা দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) ও নেত্র নিউজ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, একাত্তরের সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের তুলনা চলে না। একাত্তরে ধর্ম ও জাতি দুটোই শেষ করার লক্ষ্য ছিল। জুলাইয়ে শাসকেরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা ইতিহাসও ভুলে যায়। গুলি করে মানুষকে দমানো যায় না। একাত্তরের ২৫ মার্চ গুলি করার পরেই মানুষ জেগে উঠেছিল। জুলাইয়ে শাসকেরা নিজের দেশের মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মেরেছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

‘উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং’ বইটিতে আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক জীবন আহমেদের চোখে দেখা জুলাই অভ্যুত্থানের ছবিসংবলিত বর্ণনা উঠে এসেছে।

বইটি ও এর লেখক সম্পর্কে খুশী কবির বলেন, জীবন আহমেদ ভয়ভীতি না করে ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর কর্মজীবনের হুমকি, কাজের অনিশ্চয়তাসহ নানা বিপত্তি থাকলেও তিনি দমে যাননি। জীবনের মতো মানুষ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থানের দলিল হয়ে ওঠা উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ নাফিজের বাবা গোলাম রহমান এবং নাফিজের দেহ বহনকারী রিকশাচালক নূর মিয়া।

শহীদ নাফিজের বাবা গোলাম রহমান তাঁর ছেলের সঙ্গে শেষ কথোপকথনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘নাফিজ বলেছিল, ‘‘আব্বু তুমি যদি অনুমতি দাও, আমি বন্ধুদের নিয়ে শাহবাগের দিকে যাব।’’ যাওয়ার আগে বলেছিল, ‘‘আব্বু ভাংতি টাকা আছে?’’ আমার পকেটে তখন ১৩০ টাকা। সে কেবল ৩০ টাকা নিয়েছিল। সেটা নিয়ে মাথার পতাকা কিনেছিল। বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিল নাফিজ। এরপর জীবন আহমেদ পত্রিকায় যে ছবিটা দেয়, ওটা দেখে আমি নিশ্চিত হই, আমার ছেলে আর নাই।’ ৪ আগস্ট শহীদ হয় নাফিজ। তাঁর কপালে তখনো সেই পতাকা বাঁধা ছিল।

নাফিজকে বহনকারী রিকশাচালক নূর মিয়া বলেন, ‘আমি ছেলেটার নাম জানি না, পরিচয়ও জানি না। ওই মুহূর্তে কী পরিমাণ গুলি চলছিল, কেউ তখন আগায় আসে নাই। উনি (জীবন আহমেদ) জীবনের মায়া ত্যাগ করে ছবি তুলছেন।’

নাফিজের কপালে বাঁধা পতাকার কথা উল্লেখ করে নূর মিয়া বলেন, ‘এই পতাকার সম্মান সবাই দিতে পারে না। আমার দেশের পতাকা থাকবেই। আমরা পিস্তল নিয়া গুলি নিয়া খেলতে রাজি না। র‍্যাব ছিল, পুলিশ ছিল, একটা প্রাণী আসে নাই ছেলেটাকে ধরতে।’

উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং বইয়ের লেখক জীবন আহমেদ বলেন, ‘জুলাই এখনো চলমান। জুলাইয়ে কী ঘটেছে, সেটা ছবিসহ আমি বইয়ে তুলে ধরতে চেয়েছি।’

জুলাইয়ের মাস্টারমাইন্ড সম্পর্কে জীবন আহমেদ বলেন, ‘আসলে জুলাইয়ের কোনো মাস্টারমাইন্ড নাই। রাস্তায় যারা ছিল, তারাই মাস্টারমাইন্ড।’

প্রকাশনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নেত্র নিউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইখতিশাদ আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন নেত্র নিউজের এডিটর ইন চিফ তাসনিম খলিল, ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন প্রমুখ।

আলোচকেরা বলেন, জুলাই আন্দোলনে জীবন আহমেদের ভূমিকা কেবল সাংবাদিক-আলোকচিত্রী হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রের আস্ফালন উপেক্ষা করে সত্যকে তুলে আনার প্রতিজ্ঞায় নিজের জীবন বাজি রেখেছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, দিনের পর দিন ঘরছাড়া-ছন্নছাড়া জীবন যাপন করেছেন। তিনি আন্দোলনের সঙ্গে পুরোপুরি একাত্ম এক অংশীজন হয়ে উঠেছেন। সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বিচ্যুত না হওয়ার অঙ্গীকার তাঁকে অভ্যুত্থানের পরেও পথেই থাকতে বাধ্য করেছে। অভ্যুত্থানের দিনগুলোর মতোই তাঁর ক্যামেরায় ধরা আছে অভ্যুত্থানপরবর্তী পটপ্রবাহ, আহত ব্যক্তিদের সংগ্রাম, নিহত ব্যক্তির পরিবারের যন্ত্রণা।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button