অভিনেত্রী সিডনি সুইনির প্রসংশায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প, রহস্য কী


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচিত একটি বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে অভিনেত্রী সিডনি সুইনির প্রশংসা করেছেন। গতকাল সোমবার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, সিডনি সুইনি একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান, বর্তমানে সবচেয়ে ‘হট’ বিজ্ঞাপনে রয়েছেন। এগিয়ে যাও সিডনি!
এমি মনোনীত এই অভিনেত্রী ইউফোরিয়া এবং দ্য হোয়াইট লোটাস সিরিজে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছেন, আমেরিকান ইগল নামক একটি ব্র্যান্ডের জিন্সের বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন। সেই বিজ্ঞাপনে তিনি বলেন, Genes (জিন) পিতামাতার মাধ্যমে সন্তানের মধ্যে উত্তরাধিকারসূত্রে আসে, যা চুলের রং, ব্যক্তিত্ব, এমনকি চোখের রঙ পর্যন্ত নির্ধারণ করে। আমার jeans (জিন্স) নীল।
এই শব্দধাঁধার কারণে কিছু মানুষ ২৭ বছর বয়সী এই নীল চোখের অভিনেত্রীর বিজ্ঞাপনকে ঘিরে সমালোচনা করেছেন এবং তা রঙ ও সৌন্দর্যের মানদণ্ড সংক্রান্ত বিতর্কে রূপ নিয়েছে।
আমেরিকান ইগল বিজ্ঞাপনটির পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছে, এটি পুরোপুরি ব্র্যান্ডের ডেনিম জিন্স বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে।
বিতর্কের মূল বিষয় কী?
আমেরিকান ইগল গত ২৩ জুলাই সিডনি সুইনিকে নিয়ে ভিডিও বিজ্ঞাপন প্রচার করে। বিজ্ঞাপনটিতে স্লোগান ছিল, Sydney Sweeney has great jeans অর্থাৎ সিডনি সুইনির জিন্স দারুণ। এই স্লোগান ও বিজ্ঞাপনের শব্দচয়ন দেখে অনেকে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা শুরু করেন।
বিশেষ করে ‘great jeans’ শব্দগুচ্ছটি নিয়ে, যেখানে ‘jeans’ শব্দটি উচ্চারণে ‘genes’-এর মতো শোনায় এবং এর মাধ্যমে কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন এটি ইউজেনিক্স (eugenics)-এর ধারণার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বাতিলপ্রাপ্ত মতবাদ ইউজেনিক্সে বিশ্বাস করা হতো যে, মানব জাতিকে বেছে বেছে প্রজননের মাধ্যমে ‘উন্নত’ করা যায়।
তবে অনেকে এই সমালোচনাকে অতিরঞ্জিত বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং সুইনির পক্ষ নিয়েছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়, সিডনি সুইনি ২০২৪ সাল থেকে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান ভোটার। এরপরই ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন এবং সুইনির প্রতি সমর্থন জানান, তাঁকে ‘নিবন্ধিত রিপাবলিকান’ বলেই উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, সুইনি এখনো এই বিতর্ক নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বা তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেননি।
আমেরিকান ইগল কী বলেছে?
ব্র্যান্ডটি জানিয়েছে, পুরো প্রচারণা শুধুই জিন্স নিয়ে। তারা বলেছে, এটা তাঁর জিন্স। তাঁর গল্প। আমরা আমাদের AE জিন্স সবাই যেভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরে, সেটাকেই উদযাপন করব।
এদিকে ট্রাম্প এই বিজ্ঞাপন নিয়ে কথা বলতে শুরু করার পর থেকেই আমেরিকান ইগলের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একপর্যায়ে তা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
বিপণন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেটাফোর্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যালেন অ্যাডামসন বলেন, আমেরিকান ইগল বিজ্ঞাপনটি একদম নিখুঁতভাবে করেছে। আজকাল বিজ্ঞাপন সফল করতে হলে এমন কিছু করতে হয়, যাতে ভোক্তারাই তা শেয়ার করতে আগ্রহী হয়—ভালো হোক বা খারাপ।
তাঁর মতে, এই সামাজিক মাধ্যমের আলোচনার ঝড়ে ব্র্যান্ডটি বিনিয়োগের চেয়ে ১০ বা ২০ গুণ বেশি লাভবান হয়েছে।
সিডনি সুইনি কি সত্যিই রিপাবলিকান?
রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২৪ সাল থেকে সিডনি সুইনি ফ্লোরিডায় একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান ভোটার। তবে তিনি নিজে কখনো সরাসরি রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
২০২৩ সালে তাঁর মায়ের জন্মদিনে তোলা কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে কিছু অতিথিকে ‘Make America Great Again’ টুপি পরে থাকতে দেখা যায়।
সিডনি তখন সাড়া দিয়ে বলেছিলেন, এই নিরীহ উদযাপনকে একটা অযৌক্তিক রাজনৈতিক বক্তব্য বানানো বন্ধ করুন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি মনে করি, আমার মুখের কোনো কথাতেই এই গুঞ্জন বন্ধ হবে না। বিষয়টি এখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেছে, আমি যা-ই বলি না কেন, সেটা আর ঠিক পথে ফিরবে না।’
ট্রাম্প কী বলেছেন?
গত রোববার সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রিপোর্টাররা সুইনি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন।
একজন সাংবাদিক যখন জানান, সুইনি একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান। তখন ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি অবাক হবেন, কত মানুষ রিপাবলিকান। আমি জানতাম না, কিন্তু এটা শুনে ভালো লাগল। যদি সিডনি সুইনি সত্যিই একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান হন, তাহলে তাঁর বিজ্ঞাপন দারুণ।’
ট্রাম্প মন্তব্য করার আগেই কনজারভেটিভ মিডিয়া বিষয়টি প্রচারে কোমরে রশি বেঁধে নেমেছে। অনেকে দাবি করেন, বিজ্ঞাপনটি শুধু আমেরিকান ইগলের জন্য নয়, রিপাবলিকান পার্টির জন্যও কার্যকর প্রচারণা হয়ে উঠেছে।