আসামিদের অধিকার সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করা হবে: চিফ প্রসিকিউটর


চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, একটি সভ্য সমাজের মূল পরিচয় হলো, সমাজে ন্যায়বিচার থাকবে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের ব্যবস্থা থাকবে। আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে আসামিদের অধিকার সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করা হবে এবং এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এর মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করব যে, বাংলাদেশের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্পৃহা একটি জীবন্ত অঙ্গীকার—যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলমান থাকবে।
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে চালানো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের আগে সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রোববার (৩ আগস্ট) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালের কার্যধারায় দুজন আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার কোনোভাবেই অপরাধীর জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য বাধা হতে পারে না এবং হবে না। এই ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী রায় প্রদানের পূর্ণ ক্ষমতা রাখে। দুজন আসামি আদালতের ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ না করে বারবার অনুপস্থিত আছেন। স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন, আসামিদের ইচ্ছাকৃত পলায়ন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তা এই ট্রাইব্যুনালের সত্য অনুসন্ধান এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতের গুরুদায়িত্বকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। ন্যায়বিচারের হাত দীর্ঘ অনুপস্থিতি বা উদাসীনতা তাকে আটকাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ ও উন্নয়নের মিথ্যা বাতাবরণ তৈরি করে পরপর কয়েক মেয়াদে তাদের শাসন ক্রমশ একদলীয় দুঃশাসন, মৌলিক মানবাধিকার হরণ, ভিন্নমত দমনের নিষ্ঠুর পন্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে গেছে। ২০১০-এ প্রথম দিকে দলটি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইচ্ছেমতো সাংবিধানিক ও আইনি পরিবর্তন আনয়নের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেন্দ্রীভূত করে। বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গণমাধ্যমসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরাসরি নিয়োগ, বিধিনিষেধ এবং বাক্স্বাধীনতা হ্রাসকারী আইনের মাধ্যমে সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।’
শেখ হাসিনার বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘তৎকালীন সময়ে আসামি শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, নির্বাহী বিভাগের প্রধান, আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৪-দলীয় জোটের নেত্রী। ফলে সমস্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। একনায়কতান্ত্রিক শাসক হিসেবে তিনি এককভাবে সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন। তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়নে সর্বদা আগ্রহী ছিলেন। জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখা। তিনি ছিলেন এই সমস্ত অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু বা নিউক্লিয়াস।’
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তিনজনই সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের আসনে ছিলেন। সেখান থেকে যৌথ অপরাধমূলক পরিকল্পনা ও কমান্ড রেসপনসিবিলিটির মাধ্যমে তাদের অধীনস্থ বাহিনী ও দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের দিয়ে দেশব্যাপী প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দেন। এর ফলেই ১৪০০’র বেশি নিরপরাধ ও নিরস্ত্র ছাত্র আন্দোলনকারী নিহত হয়।’