ফুঁসছে তিস্তা, ডুবছে নিম্নাঞ্চল


টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে উত্তরের নদ-নদীর পানি বেড়েছে; বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় রংপুর বিভাগের অন্তত চার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এরই মধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, ভারতের জলপাইগুড়ি, মেঘালয় ও সিকিমে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত এবং দেশের অভ্যন্তরেও বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
কুড়িগ্রাম: পাউবো কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণকক্ষের প্রতিবেদন বলছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের পানি বেড়েছে। এই সময়ে তিস্তার পানি রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে ধরলা নদীর পানির সমতল কুড়িগ্রাম শহরের ধরলা ব্রিজ গেজমিটারে কমছিল।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। ধরলা ও দুধকুমারের নিম্নাঞ্চলেও সতর্কতা রয়েছে।’
বার্তায় বলা হয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে ১৬০ মিলিমিটার এবং মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি, আসাম ও মেঘালয় অঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ সংশ্লিষ্ট নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
নীলফামারী: রোববার সকাল ৯টায় জেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি রেকর্ড করা হয় ৫২.১৬ মিটার, যা বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরে। এরপর দুপুর ১২টা ও বেলা ৩টায় পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ মিটার; যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। নদীপারের বাসিন্দারা জানান, শনিবার রাত থেকে পানির গতি দ্রুত বেড়েছে। এরই মধ্যে নদীতীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
লালমনিরহাট: নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। তিস্তাপারের চরাঞ্চলের সড়ক, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ডুবে গেছে। নৌকা ও ভেলাই এখন যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ধান ও বিভিন্ন সবজিখেত; পুকুর থেকে ভেসে যাচ্ছে মাছ।
তিস্তা নদী লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর পানি সামান্য বাড়লেই প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। এই দফায়ও জেলার আদিতমারী, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, পাটগ্রাম এবং সদর উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো বন্যাকবলিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়ছে। নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি।’
[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]